×

জাতীয়

জাতীয় নির্বাচন: চার প্রস্তুতি ইসির নজর

Icon

হরলাল রায় সাগর

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৫০ পিএম

জাতীয় নির্বাচন: চার প্রস্তুতি ইসির নজর

ছবি : সংগৃহীত

অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরমধ্যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশেষ নজর দিচ্ছে নির্বাচনী সংস্থাটি। ভোটের নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে কিংবা নির্বাচনী সহিংসতারোধে প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হবে ভোটের সময়।

তবে এর আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে ইসি। একই সঙ্গে ভোটগ্রহণ কিংবা নির্বাচনী কর্মকর্তা ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা এবং একই দিনে দুই ভোট ও প্রবাসীদের ভোট নিতে পোস্টাল ভোটের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। এ লক্ষ্যে একটি সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে ধারণা নিতে ইতোমধ্যে মক ভোটিং ও লটারির মাধ্যমে পুলিশ সুপার নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।

আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার কথা জানিয়েছে ইসি। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সরকার। একই চাওয়ায় সোচ্চার রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচন কমিশনও ওয়াদা করেছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়ার। এ লক্ষ্যে সংস্থাটি কর্মযজ্ঞ সাজিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি। এ ছাড়াও বিশিষ্ট নাগরিক, শিক্ষক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, পর্যবেক্ষক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে সংস্থাটি। ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সীমানা নির্ধারণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে ইসির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী মাঠ নিয়ন্ত্রণ করা।

ইসি জানিয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেশে প্রায় দুই লাখ ৪৫ হাজার ভোটকক্ষের ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র থাকবে। তবে এরমধ্যে ২৮ হাজার ৬৬৩টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। আবার এরমধ্যে ৮ হাজার ২২৬টি কেন্দ্রকে ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ, এবার মোট ভোটকেন্দ্রের প্রায় ৬৭ শতাংশই নিরাপত্তা-ঝুঁকিতে রয়েছে। নির্বাচন কমিশনও সহিংসতা, কেন্দ্র দখল ও গুজব-সৃষ্ট আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতা ও ড্রোন ব্যবহারের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।

সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোটের আগে পরে ৮-৯ দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাত লাখ ৬৮ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। এরমধ্যে এক লাখ ৫০ হাজার পুলিশ সদস্য, পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার আনসার ও ভিডিপি সদস্য (এক লাখ ৩৫ হাজার সশস্ত্র এবং চার লাখ ৫০ হাজার নিরস্ত্র সদস্য), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৩৩ হাজার সদস্য (১ হাজার ১০০ প্লাটুন)। এছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর ৮০ হাজার সদস্য ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে মাঠে থাকবেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে গড়ে ১৩ জন নিরাপত্তা সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিরপেক্ষ ও দক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে বিশেষ নির্বাচন-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলাকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে চিহ্নিত ও আইনের আওতায় আনতে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে কার্যকর মনিটরিং নিশ্চিত করতে চায় ইসি। এক্ষেত্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপরই থাকবে। নির্বাচনকালীন সমন্বয়ের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর এবং প্রতিটি জেলায় নির্বাচন কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হবে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সিসিটিভি ক্যামেরা ও বডিওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জানিয়ে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূর্ণরূপে নির্বাচনকেন্দ্রিক; ব্যাপক নিরাপত্তা এবং সমন্বয় পরিকল্পনা ইতোমধ্যেই কার্যকর করছে। তিনি জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও নির্বাচনের আগে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

সরকার চাইছে নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ মাঠ প্রশাসন। এমনকি নির্বাচনী অর্থাৎ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদেরও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে সরকার। এই সময়ের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোও প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগপন্থী কর্মকর্তা রয়েছে বলে অভিযোগ করে তাদের সরিয়ে নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে আসছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রিটার্নিং ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং লটারির মাধ্যমে এসপি নিয়োগের দাবি জানিয়েছে দলগুলো।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে লটারির মাধ্যমে ৬৪ জেলায় পুলিশ সুপার (এসপি) নির্বাচন চ‚ড়ান্ত করার কথা জানিয়েছে সরকার। বর্তমানে জেলাগুলোতে দায়িত্বরত এসপিদের মধ্যে ১৫ জনকে বাদ দেয়া হয়েছে; নতুন ১৫ জন এসপি পদায়ন করা হবে। শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তাদের পদায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটের ব্যবস্থা করছে নির্বাচন কমিশন। তারা পছন্দের প্রার্থীকে ডাকযোগে ভোট (পোস্টাল ভোট) দিতে পারবেন। এই পোস্টাল ভোটিং একটি জটিল প্রক্রিয়া। এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে যেসব প্রবাসী ভোট দিতে আগ্রহী, তাদেরকে মোবাইল ফোন অ্যাপের (পোস্টাল ভোট বিডি) মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোটের আগেই নিবন্ধন করতে হবে। এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে, যা চলবে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। নিবন্ধনের পর রিটার্নিং কর্মকর্তা আলাদা ভোটার তালিকা প্রস্তুত করবেন।

নিবন্ধনের সময় দেয়া ঠিকানায় পাঠানো হবে ব্যালট পেপার ও ফিরতি খাম। প্রার্থিতা চ‚ড়ান্ত হওয়ার পর ভোটার অ্যাপে প্রার্থীর প্রতীক দেখে ভোট দেবেন। ব্যালটে নাম নয়, থাকবে কেবল প্রতীক। ভোট দেয়া ব্যালট ফিরতি খামে পোস্ট অফিস বা পোস্টবক্সে জমা দিলেই তা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পৌঁছাবে। সব পোস্টাল ভোট সরকারি কোষাগারে সংরক্ষিত থাকবে এবং ভোটের দিন গণনা করা হবে।

নির্বাচন কমিশন জানায়, ১৪৩টি দেশে থাকা প্রায় ৫০ লাখ প্রবাসী ভোটারকে লক্ষ্য করে প্রাথমিকভাবে ২০ লাখ ব্যালট পেপার ছাপানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে প্রয়োজন হলে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ব্যাপক পরিসরে প্রবাসীদের ডাকযোগে ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিত হচ্ছে।

ভোটগ্রহণের দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে প্রিসাইডিং অফিসারসহ প্রায় ১০ লাখ লোক বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। তাদের মধ্যে যারা ভোটের দিনে নিজেদের কেন্দ্রে ভোট দিতে পারেন না, তাদের জন্য এবার ভোট দেয়ার বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি চাকরিজীবী এবং কারাগারে থাকা বন্দীদের জন্যও ভোটদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই আলাদা ব্যালটে গণভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গণভোটে ভোটকেন্দ্র ও জনবল, সরঞ্জাম, ব্যালট বক্স ও ব্যালট বেশি লাগবে। এর প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন। সংসদ ভোটের ব্যালট সাদাকালো এবং গণভোটের ব্যালট কাগজ রঙিন হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে এই গণভোটের ধারণা বর্তমান প্রজন্মের কাছে নতুন হওয়ায় এর বিরাট চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চারটি বিষয়ে একটি প্রশ্নে ‘হ্যা’ বা ‘না’ ভোট দিতে হবে ভোটারকে। এজন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে ভোটারদের সচেতন করারও উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। একই সঙ্গে দুটি ভোট অনুষ্ঠান নিয়ে অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্য শনিবার রাজধানীতে মক ভোটিংয়ের ব্যবস্থা করে নির্বাচন কমিশন।

একটা ভোটকেন্দ্রে কী ধরনের আবহ থাকা দরকার, কী ধরনের পরিবেশ থাকা দরকার, ভোটাররা কী কী রকম হবে, পোলিং অফিসার কী রকম করে বসবে, প্রিজাইডিং অফিসার কী রকম করে বসবে, ভোটগ্রহণ কীভাবে হবে, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের ভ‚মিকা ইত্যাদি বিষয়ে বাস্তব ধারণা নেয়া হয় এই মক ভোটিংয়ে। এসময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, মক ভোটিংটা যেরকম হলো, সেইভাবে একটা ইলেকশন উপহার দিতে চাই, এমন স্বচ্ছভাবে ভোট করতে চাই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ধীরে ধীরে উন্নতি হবে এবং পরিস্থিতি নির্বাচনের অনক‚ল থাকবে। তফসিলের পর প্রয়োজন হলে প্রশাসনে রদবদলের উদ্যোগ নেবেন বলে জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৩১

ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৩১

বিশ্ব রেকর্ডগড়া তামিমের ফিফটি, সিরিজ জয় বাংলাদেশের

বিশ্ব রেকর্ডগড়া তামিমের ফিফটি, সিরিজ জয় বাংলাদেশের

লালমনিরহাটে ৫ থানার ওসিদের একযোগে বদলি

লালমনিরহাটে ৫ থানার ওসিদের একযোগে বদলি

আগুন ঝুঁকিতে রাজধানী, প্রস্তুতি-নজরদারী সীমিত

আগুন ঝুঁকিতে রাজধানী, প্রস্তুতি-নজরদারী সীমিত

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App