সরকারের শেষ সময়ে দাবির হিড়িক
সেবিকা দেবনাথ
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৪৪ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দাবির পাহাড় নিয়ে রাজপথে নামেন বিভিন্ন সংগঠন ও পেশাজীবী মানুষ। এর মধ্যে কিছু দাবি মেনেও নেয় সরকার। বাকিদের দেয়া হয় আশ্বাস; যার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি এখনো। ইতোমধ্যে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই হিসেবে এই সরকারের মেয়াদও প্রায় শেষের পথে।
সরকারের মেয়াদের একেবারে শেষপ্রান্তে এসে আবারো মাঠে নেমেছেন সেসব সংগঠন ও পেশাজীবীরা; যাদের সরকার আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু কথা রাখেনি। আবার নতুন নতুন দাবি নিয়েও আন্দোলন শুরু করে বিভিন্ন সংগঠন ও পেশাজীবীরা। জাতীয় প্রেস ক্লাব, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, সড়ক অবরোধ, কর্মবিরতিসহ হরেক কর্মসূচি পালন করছে তারা।
দাবি আদায়ে এক মাস ধরে রাজপথে নন-এমপিও শিক্ষকরা :
গত এক মাস ধরে স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও চত্বরে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছেন নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। তবুও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় তাদের হতাশা ও ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঐক্য পরিষদ’ এর ব্যানারে শিক্ষকরা তাদের কর্মসূচি শুরু করেন। এর আগে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একযোগে এমপিওভুক্ত করার দাবিতে গত ২ নভেম্বর রাজধানীতে আন্দোলন শুরু করেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শিক্ষকরা।
তারা জানান, আন্দোলনের শুরুতে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার আশ্বাস মিললেও এরপর আর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শিক্ষকরা মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, অনশন, কালো ব্যাজ ধারণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। আন্দোলনের মিছিলে আঘাতপ্রাপ্ত ও অসুস্থ শিক্ষকের সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিদিন। শিক্ষক নেতারা বলেন, সরকার নীতিগতভাবে এমপিওভুক্তির কথা বললেও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। আমরা কোনো প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তব সিদ্ধান্ত চাই। যত দিন প্রয়োজন আন্দোলন চলবে।
৪০ দিনেও মেলেনি সাড়া, আন্দোলনে অনড় বিশেষ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা :
প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্তিসহ ৫ দফা দাবিতে গেল ২৬ অক্টোবর থেকে ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সমন্বয় পরিষদের’ ব্যানারে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। তবে এখন পর্যন্ত সরকারের দিক থেকে কোনো ইতিবাচক বার্তা না পাওয়ায় শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাবেন তারা। কর্মসূচিতে অংশ নেয়া শিক্ষকরা বিভিন্ন সময়ে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের চেষ্টা করলেও পুলিশের বাধায় সেই কর্মসূচিগুলো পণ্ড হয়েছে। প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো- অনতিবিলম্বে সব বিশেষ (অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী) বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তি সুনিশ্চিত করা; সব বিশেষ বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামো নিশ্চিত করা; বিশেষ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি ৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করা; শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মিড-ডে মিল’, শিক্ষা উপকরণ, খেলাধুলা সরঞ্জাম প্রদান এবং থেরাপি সেন্টার চালু করা; শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষাক্রমের আওতায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা এবং সব চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নির্ধারিত কোটা বাস্তবায়ন করা।
৫ দিন ধরে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি স্বাস্থ্য সহকারীদের :
নিয়োগবিধি সংশোধন বেতন বৈষম্য নিরসন ও টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানসহ ৬ দফা দাবি আদায়ে, গত ৫ দিন ধরে কর্মবিরতিসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। এতে দেশের ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রে টিকাদান সেবা বন্ধ আছে। সেবা না পেয়ে মা ও শিশুরা টিকা কেন্দ্রে এসে টিকা না পেয়ে শীতের মধ্যে কোমল মতি নবজাত শিশুদের নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। তবে এ ভোগান্তি কবে নাগাদ অবসান হবে তা অনিশ্চিত। গতকাল চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা।
‘বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন’ এর ব্যানারে ২৯ নভেম্বর থেকে এই অবস্থান কর্মবিরতি শুরু করেন। এর আগে গত ২৩ নভেম্বর সংগঠনটি জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছিল, ২৮ নভেম্বরের মধ্যে দাবি মানা না হলে তারা এ কর্মবিরতিতে যাবেন।
তাদের দীর্ঘদিনের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-
নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতা সংযুক্ত করে ১৪তম গ্রেড দান, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা সম্পন্নকারীদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দেয়া, পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিত করা, সব স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শককে প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা, বেতন স্কেল পুর্নর্নিধারণের সময় প্রাপ্ত টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেল সংযুক্ত করা ও ইতোমধ্যে ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) কোর্স সম্পন্নকারীদের সমমান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া। এর আগেও গত অক্টোবরে একই দাবিতে তারা কর্মবিরতি পালন করেন। কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তখন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল।
পে-স্কেলের দাবিতে আগামী মাস থেকে মাঠে নামছেন সরকারি কর্মচারীরা :
জাতীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ দ্রæত কার্যকরসহ ৫ দফা দাবিতে আগামী মাস থেকে নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ। সংগঠনটি জানুয়ারি মাসে ঢাকায় একটি জাতীয় সমাবেশ এবং জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে সচিবালয় অভিমুখে লং মার্চ আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে নীতিনির্ধারণী কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নোমানুজ্জামান আজাদ এই কর্মসূচিগুলো তুলে ধরেন। এর অংশ হিসেবে গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপিও দেয়া হয়েছে। সংগঠনের মহাসচিব বদরুল আলম সবুজ বলেন, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় বেতন কমিশনের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ এবং আগামী ১ জানুয়ারি থেকে তা বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়েছে। টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনরায় চালু, শতভাগ পেনশন সুবিধা বজায় রাখা, প্রশাসনিক আর্থিক বৈষম্য দূর করা এবং সচিবালয়ের মতো একীভ‚ত নিয়োগবিধি প্রণয়নের লক্ষ্যে জাতীয় সার্ভিস কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এছাড়া সব অস্থায়ী কর্মচারীকে নিয়মিত করা, ন্যায্যমূল্যে মানসম্মত রেশন নিশ্চিত করা, আউটসোর্সিং বাতিল করে শূন্যপদে সরাসরি রাজস্ব খাতে নিয়োগ এবং ব্লাক পোস্টে পদোন্নতির পথ তৈরি করার দাবি জানানো হয়।
আজ যমুনা অভিমুখে বিক্ষোভ, কাল মশাল মিছিল বাম দলগুলোর :
বিদেশি কোম্পানির কাছে বন্দর ইজারা দেয়ার প্রতিবাদে ও বন্দর রক্ষার দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’ অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা, বাংলাদেশ জাসদ ও জাতীয় গণফ্রন্ট যৌথভাবে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে একই দাবিতে আগামী শুক্রবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও মশাল মিছিলের কর্মসূচি পালন করবে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদসহ (স্কপ) আন্দোলনরত সংগঠনগুলো।
বন্দরসহ জাতীয় সম্পদ রক্ষা এবং সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে এই কর্মসূচি নেয়া হয়েছে বলে জানান আন্দোলনরত বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ। তিনি বলেন, লালদিয়ায় টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ডেনমার্কের কোম্পানি এপিএম টার্মিনালের সঙ্গে ৩০ বছরের জন্য সম্পাদিত জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি এবং পানগাঁওয়ে নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি চট্টগ্রাম বন্দরের নৌ টার্মিনাল পরিচালনা করার জন্য সুইজারল্যান্ডের কম্পানির সঙ্গে সম্পাদিত ২২ বছর মেয়াদি চুক্তি বাতিল, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল, পতেঙ্গা বে-১ ও বে-২ টার্মিনাল এবং মোংলা বন্দর বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী কোম্পানিকে ইজারা দেয়ার পাঁয়তারা বন্ধ করার দাবিতে এবং মার্কিন-ভারতসহ সাম্রাজ্যবাদী-আধিপত্যবাদী শক্তির সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি প্রকাশ ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসম চুক্তিসমূহ বাতিলের দাবিতে যমুনা অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
পে-স্কেলের দাবিতে শুক্রবার মহাসমাবেশ, থাকবেন শিক্ষকরাও :
নতুন পে-স্কেলের দাবিতে আগামীকাল শুক্রবার মহাসমাবেশ করবেন কর্মচারীরা। নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে কর্মসূচি ঠিক করতে সম্প্রতি বৈঠকে বসে কর্মচারীদের কয়েক ডজন সংগঠন। সেখানেই মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঠিক করা হয়। এ দিকে ৯ম পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে শুক্রবার ঢাকায় মহাসমাবেশে উপস্থিত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজীজি। তার সঙ্গে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাও এ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। গতকাল বুধবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে পে-স্কেলের কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতা আজীজি।
প্রসঙ্গত, গত জুলাইয়ের শেষ দিকে সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানকে সভাপতি করে ২৩ সদস্যের জাতীয় বেতন কমিশন ২০২৫ গঠন করে সরকার। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ ছিল, কমিশনের প্রথম সভার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিতে হবে। কমিশন গঠনের পর অর্থ উপদেষ্টা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এই সরকারই নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করবে। কিন্তু সম্প্রতি উপদেষ্টা জানিয়েছেন, নির্বাচিত সরকার নতুন কমিশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। বিষয়টি নিয়ে কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়লে একজোট হয় বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন।
সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলছে :
৩ দফা দাবি আদায়ে গতকাল বুধবার সকাল থেকে সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন সহকারী শিক্ষকরা। অসংখ্য বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন শিক্ষকরা, এতে বন্ধ রয়েছে চলমান বার্ষিক পরীক্ষা। সহকারী শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো ১০ম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান ও শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি। প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মু. মাহবুবর রহমান বলেন, শিক্ষকরা স্বতস্ফূর্তভাবে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন। দেশের সব বিদ্যালয় বন্ধ। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলমান থাকবে।
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বর্তমানে ১০ম গ্রেডে উন্নীত হয়েছেন। তবে সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। তারা এ নিয়ে অসন্তুষ্ট। গ্রেড উন্নীতকরণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। গত ৮ থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। এ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের হামলায় দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হন। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে শিক্ষকরা ক্লাসে ফেরেন। তবে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি না থাকায় ২৭ নভেম্বর থেকে ফের কর্মবিরতি শুরু করেন তারা। এরপর ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করেন।
১০ম গ্রেডের দাবিতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতি :
১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের দাবিতে সরকারি হাসপাতালে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। এ সময় বন্ধ রাখা হয়, ব্ল্যাড ব্যাংক, রেডিওলজির সিটিস্ক্যান, এক্স-রের মতো অতি জরুরি বিভাগগুলো। বন্ধ করে রাখা হয় রোগীদের সরকারি ওষুধ দেয়াও। আন্দোলনকারীরা জানান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট পদ সৃষ্টির পর থেকে তাতে পদোন্নতির কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। বারবার আশ্বাস দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি মন্ত্রণালয়। বুধবারের অর্ধদিবস কর্মবিরতির পরও দাবি মানা না হলে বৃহস্পতিবার থেকে সব সরকারি হাসপাতাল শাটডাউনের হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারী টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা।
মাধ্যমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত :
৪ দফা দাবিতে ১ ডিসেম্বর থেকে কর্মবিরতির কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এ কর্মসূচির কারণে দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে সোমবার ও মঙ্গলবার বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। তবে মঙ্গলবার রাতে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সমিতির ন্যায্য দাবি-দাওয়াগুলো দ্রুত সমাধানের পথে এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগ চাওয়া হচ্ছে। যাতে ভবিষ্যতে আর কোনোভাবে শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত না হয়। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা ও শিক্ষাজীবনকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে বুধবার থেকে সারাদেশের বিদ্যালয়ে সুষ্ঠুভাবে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। সংগঠনের পরবর্তী সিদ্ধান্ত আলোচনার মাধ্যমে শিগগিরই জানিয়ে দেয়া হবে।
দাবি আদায়ে ঢাকা কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ :
প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ জারির দাবিতে প্রায়ই সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের। গতকাল ঢাকা কলেজের সামনে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। পরে ঢাকা কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা আজিমপুর মোড় ঘুরে এসে ঢাকা কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। এতে বন্ধ হয়ে গেছে মিরপুর সড়কের যান চলাচল। নিউমার্কেটসহ আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী যাত্রী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ পথচারীরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তিন দফা আলোচনার পরও অধ্যাদেশের ব্যাপারে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এতে প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। এ কারণে তারা বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানান তারা।
ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান জিহাদ বলেন, গত দেড় বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় সংকট দূর করতে আমাদের নিরন্তর লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। গত অক্টোবরে রাষ্ট্র একটি খসড়া অধ্যাদেশ জারি করেছে- যা আমাদের জন্য একটি সুন্দর ও আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় মডেল তৈরি করতে পারে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সাত কলেজের কিছু শিক্ষা ক্যাডার নিজেদের স্বার্থে এই মডেলের বিরোধিতা করছে। এ কারণে আমরা দেড় বছর ধরে রাস্তায় নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন করে আসছি।
৫ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ ইডেন কলেজ শিক্ষার্থীদের :
৫ দফা দাবিতে গতকাল সকাল ১১টার দিকে কলেজের ২ নম্বর গেটের আজিমপুর-নীলক্ষেত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবি হলো- ইডেনকে শুধু নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা; ইডেন মহিলা কলেজের কোনো ডিপার্টমেন্ট বিলুপ্ত করা যাবে না; বিশ্ববিদ্যালয়ের সময় ১টা থেকে ৭টা না, ২৪ ঘণ্টা রাখতে হবে; ইডেনকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাখা, ইন্টারমিডিয়েট চালু না করা; ইডেন কলেজ মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার যোগ্যতা রাখে, সেখানে ইডেনকে শুধু একটি ফ্যাকাল্টিতে রূপান্তর করা যাবে না। শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে ঢাকার ব্যস্ত ওই সড়কে যানজট তৈরি হয়, এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারীরা।
