নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৪৪তম জন্মদিন ও ৯২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হই, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে রোকেয়া দিবস।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত প্রধান অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় চার বিশিষ্ট নারীর হাতে তুলে দেবে রোকেয়া পদক। এ বছর পদক পাচ্ছেন— নারীশিক্ষা (গবেষণা) বিভাগে রুভানা রাকিব, নারী অধিকার (শ্রম অধিকার) বিভাগে কল্পনা আক্তার, মানবাধিকার বিভাগে নাবিলা ইদ্রিস এবং নারী জাগরণ (ক্রীড়া) বিভাগে ঋতুপর্ণা চাকমা।

জাতীয় পুরস্কার-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির চূড়ান্ত সুপারিশের ভিত্তিতে নারীশিক্ষা, নারী অধিকার, মানবাধিকার ও নারী জাগরণে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের এ পদক দেওয়া হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।

রোকেয়া দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, ঊনবিংশ শতাব্দীতে নারীর অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি যে শিক্ষা— তা উপলব্ধি করে বেগম রোকেয়া বিরাট সাহসিকতার সঙ্গে নারীশিক্ষা বিস্তারে কাজ করেন। তার আদর্শের ধারাবাহিকতায় নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তিনি পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান এবং দিবসের কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

দিবসটি উপলক্ষে ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, র‌্যালি, পোস্টার, বুকলেট ও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে।

রোকেয়ার সংগ্রাম ও অবদান

১৮৮০ সালের আজকের দিনে রংপুরের মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বেগম রোকেয়া। সে সময় মুসলিম সমাজে মেয়েদের শিক্ষা প্রায় নিষিদ্ধ থাকলেও তিনি বড় ভাইয়ের সহায়তায় উর্দু, বাংলা, আরবি ও ফারসি শিখেছিলেন। পরবর্তীতে স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের উৎসাহে নারীশিক্ষা বিস্তারে নিজেকে নিয়োজিত করেন।

নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে লেখালেখি ও সমাজ সংস্কারে আজীবন কাজ করে গেছেন তিনি। ‘মতিচূর’, ‘সুলতানার স্বপ্ন’, ‘পদ্মরাগ’ ও ‘অবরোধবাসিনী’ তার উল্লেখযোগ্য রচনা। ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় তিনি নির্বাচিত হন ষষ্ঠ স্থানে।

রংপুরে নানা কর্মসূচি

রোকেয়ার জন্মস্থান পায়রাবন্দে সকালে জন্মভিটার বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন ও সংগীত প্রতিযোগিতা এবং নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে।

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে র‌্যালি, আলোচনা সভা, প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মাছুমা হাবিব। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম।

এ ছাড়াও রংপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে নারী সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি আয়োজন করেছে।

নারী জাগরণ, শিক্ষা ও অধিকারের সংগ্রামে বেগম রোকেয়ার অবদান আজও প্রেরণার উৎস হয়ে আছে।