×

রাজনীতি

স্থানীয় সরকার-সংখ্যানুপাত ইস্যু আবারো সামনে আনলো জামায়াত

Icon

ঝর্ণা মনি

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ০৫:০৮ পিএম

স্থানীয় সরকার-সংখ্যানুপাত ইস্যু আবারো সামনে আনলো জামায়াত

ছবি: সংগৃহীত

অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর জোরালো হয়ে ওঠে সংস্কার ইস্যু। রাজনৈতিক ও নির্বাচন সংস্কারে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবি তোলে জামায়াতে ইসলাম। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনও চায় দলটি। এরপর বেশ কিছুদিন ওই দুই ইস্যুতে নীরব ছিল তারা। সম্প্রতি লন্ডনে ইউনূস-তারেক বৈঠকের পর আবারো এই দুই ইস্যু নিয়ে কথা বলছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এই দুই ইস্যুতে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছে জামায়াত ও তার দীর্ঘদিনের মিত্র একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা বিএনপি। বিএনপির দাবি, এরকম ইস্যু সামনে এনে নির্বাচন পেছানোর কৌশল খুঁজছে জামায়াত। দলটির দাবি, এ ধরনের বড় সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার নয়, করবে জাতীয় সংসদ। তাই আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, পরে অন্য কিছু। এদিকে, বিশ্বের উন্নত দেশের উদাহরণ তুলে ধরে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে লাভবান হবে জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলো। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতির নির্বাচনের সুফল পেয়েছে প্রধান বড় দুটি দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ। নির্বাচনগুলোতে জয়-পরাজয়ের ভিত্তিতে আসন ভাগাভাগি হওয়ায় যে দল বিজয়ী হয়েছে, তারাই সংসদের বেশির ভাগ আসন পেয়েছে। কিন্তু অনেক আসনেই দেখা যায় জয়ী আর পরাজিত প্রার্থীর ব্যবধান খুবই কম। সংসদীয় পদ্ধতি চালুর পর ২০০৮ পর্যন্ত চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রধান দুটি বড় দল তাদের ভোটের হারের তুলনায় আসন বেশি পেয়েছে। এটা বেশি ঘটেছে বিজয়ী দলের ক্ষেত্রে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি যে ভোট পেয়েছিল তার শতকরা হার ৩০ দশমিক ৮১ শতাংশ। 

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত ভোটের হারও প্রায় একইরকম ৩০ দশমিক ০৮ শতাংশ। কিন্তু বিএনপি জয়ী হয় ১৪০ আসনে, আর আওয়ামী লীগ পায় ৯৩ আসন। অর্থাৎ দুই দলের ভোটের হার অনেকটা একইরকম থাকলেও জয়ী দল বিএনপি সংসদে অনেক বেশি আসন পেয়ে যায়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আবার এর সুফল পায় আওয়ামী লীগ। দলটি ৩৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ১৪৬টি। অন্যদিকে, বিএনপি ৩৩ দশমিক ৬১ শতাংশ ভোট পেলেও আসন পায় ১১৬টি। ২০০১ সালের নির্বাচনেও দুই দলের ভোটের হার ছিল অনেকটা একই রকম। বিএনপি ৪০ দশমিক ৮৬ শতাংশ ভোট আর আওয়ামী লীগ পায় ৪০ দশমিক ২১ শতাংশ ভোট। কিন্তু জয়ী দল বিএনপি প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসন অর্থাৎ ১৯৩ আসন পেয়ে যায়। আওয়ামী লীগ পায় ৬২টি।

বিশ্লেষকদের মতে, আনুপাতিক নির্বাচন হলে ২০০১ সালের নির্বাচনে ৪০ দশমিক ৮৬ শতাংশ ভোট পাওয়ায় জয়ী দল বিএনপির আসন হতো ১৯৩টির বদলে সর্বোচ্চ ১২৩টি। এবং আসন বাড়ত আওয়ামী লীগের। তারা ৪০ দশমিক ২১ শতাংশ ভোট পাওয়ায় তিনশ আসনের মধ্যে তাদের ভাগে আসত ১২০টি আসন। সেক্ষেত্রে সংসদে দুই দলই থাকত প্রায় সমান সমান অবস্থায়।

এ ব্যাপারে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ (জানিপপ) চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়। বাংলাদেশেও নারী আসনগুলোতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয। তাহলে সব আসনে হলে সমস্যা কোথায়?

জামায়াতের লাভের অঙ্ক: 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনে জামায়াতের সুবিধা বেশি। জামায়াতকেও বাড়তি আসন পাওয়ার সুযোগ করে দেবে এই ব্যবস্থা। প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, আগের হিসাবে যে দল জয়ী হতো তার আসন কমে যাবে, সেগুলো পাবে অন্য দলগুলোÑ তাদের ভোটের হার অনুযায়ী। জামায়াতে ইসলামী, অন্যান্য ইসলামী দল এবং ছোট ছোট দলগুলো সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে লাভবান হবে।

তবে দলটির নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) নির্বাচন ব্যবস্থার পক্ষে জোরালো মতামত ব্যক্ত করেছি। বিশ্বাস করি, এই ব্যবস্থায় জনগণের মতামত সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে। ফ্যাসিবাদী শাসন পুনরায় ফিরে আসার পথও রুদ্ধ হবে।

দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি ছাড়া আগামী নির্বাচন দেশের মানুষ মানবে না। এ নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঐক্য তৈরি হয়েছে। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আমরা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চাই। ভোটে পিআর (সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি) পদ্ধতি চাই। ঐকমত্য কমিশনেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে। আমরা এই দাবি জানিয়েছি। 

যে কারণে বিএনপির বিরোধিতা: 

বিগত কয়েকটি নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, আনুপাতিক নির্বাচন হলে বিএনপির জন্য এককভাবে জয়ী হওয়ার পথ কঠিন হয়ে যাবে। এমন আলোচনা রয়েছে দলটির বিভিন্ন পর্যায়েও। এছাড়া এসব সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকার এবং জাতীয় সংসদের মাধ্যমেই হওয়া উচিত বলে মনে করেন দলটির নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অবশ্য বলেন, বাংলাদেশে আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর মতো পরিস্থিতি নেই। নতুন পদ্ধতি চালু করতে হলে পুরো রাজনীতির সংস্কৃতি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় কাঠামো সবখানেই পরিবর্তন আনতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন, স্থানীয় সরকারের পুরো কাঠামো বদলে ফেলতে হবে। আনুপাতিক নির্বাচনে ঝুলন্ত সংসদ হয়ে যেতে পারে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এটি একটা বড় প্রশ্ন।

বিএনপিরসহ সাংগঠনিক সম্পাদক কলিমউদ্দীন আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন আমাদের সংবিধানে নেই। আমাদের সংবিধান এবং আইনের ভেতরে থেকে কাজ করতে হবে। এমন সিদ্ধান্ত নিতে হলে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটের মাধ্যমে নিতে হবে। এমন সিদ্ধান্ত হুট করে নেয়া যায় না। কেউ যদি নির্বাচন পেছানো কিংবা বানচালের কৌশল হিসেবে এসব দাবি করে, তাহলে তা ঠিক নয়। এখন প্রয়োজন ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

কুমিল্লায় ধর্ষণকাণ্ডে তোলপাড়: সোশ্যাল মিডিয়ায় তারকারা কে কি লিখলেন

কুমিল্লায় ধর্ষণকাণ্ডে তোলপাড়: সোশ্যাল মিডিয়ায় তারকারা কে কি লিখলেন

এনবিআরের শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার

এনবিআরের শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার

বাহরাইনকে ৭-০ গোলে হারালো বাংলাদেশ

বাহরাইনকে ৭-০ গোলে হারালো বাংলাদেশ

বৈঠকে বসছেন নেতানিয়াহু, গাজায় যুদ্ধবিরতি হওয়ার সম্ভাবনা

বৈঠকে বসছেন নেতানিয়াহু, গাজায় যুদ্ধবিরতি হওয়ার সম্ভাবনা

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App