আধিপত্য হারাচ্ছে ডলার, আমেরিকার পতন কী আসন্ন?

দুরুল হক
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫, ০৮:২৫ পিএম
কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না আমেরিকার মুদ্রা। দেশটির কারেন্সির মান আজ একটু বাড়ছে তো কালই কমে যাচ্ছে। আবারো মার্কিন ডলারের দাম গত ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সামনের দিনে আমেরিকার অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হতে পারে। সেই সঙ্গে ইউএস অর্থনৈতিক শক্তি হ্রাস পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এই আশঙ্কায় গোটা বিশ্বে ক্রমশও আধিপত্য হারাচ্ছে ডলার।
২৭ জুন আমেরিকার মুদ্রার মূল্যমান কমেছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। আলোচ্য কার্যদিবসে ডলার সূচক দাঁড়িয়েছে ৯৭ দশমিক ১৮৩-এ। বিগত ৩ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে যা সর্বনিম্ন। সবমিলিয়ে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মার্কিন ডলারের অবনমন ঘটেছে ১০ শতাংশ। ১৯৭০ সালের প্রথমার্ধের পর যা সর্বোচ্চ অবমূল্যায়ন। কারণ, বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডলারের চাহিদা কমেছে। ফলশ্রুতিতে মুদ্রাটির দরও হ্রাস পাচ্ছে।
এই ফাঁকে ব্যাপক শক্তি সঞ্চয় করেছে ইউরো। ইতোমধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মূল মুদ্রাটির মূল্য গত ৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে মার্কিন ডলারের পতন অবশ্যম্ভাবী। সেই সঙ্গে সিংহাসনে উঠবে ইউরো। এখন মুদ্রাটি বিক্রি হচ্ছে ১ দশমিক ১৭১৩ ডলারে। আগামীতে এর দাম আরো বাড়তে পারে।
ইউএস ডলারের দাম কমায় আমেরিকার পণ্য রপ্তানির খরচ কমবে। কিন্তু আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। ফলে মার্কিন নাগরিকদের জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি পাবে। কারণ, মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হবে। এই প্রেক্ষাপটে দেশে-বিদেশে তাদের চলাফেরা ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। তাই অনেক বিশেষজ্ঞ আমেরিকার শেষ দেখে ফেলেছেন। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পতনের আশঙ্কাও করছেন তারা।
গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রাম্প। পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন মুলুকের সঙ্গে বাণিজ্য কমিয়ে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো মিত্র দেশগুলো। ভারত-পাকিস্তান, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছেন তিনি। এতে তার ছলচাতুরি ধরা পড়ে গেছে। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধাক্কা খেয়েছে আমেরিকা। এসব অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব ব্যাপক কমে যেতে পারে।
ইতোমধ্যে ঋণের খরচ কমানোর জন্য আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারের রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি বিতর্কিত ‘বিগ, বিউটিফুল বিল’ উত্থাপন করেছেন তিনি। তাতে স্পষ্ট মার্কিন অর্থনীতি ভালো অবস্থায় নেই। এবার আমেরিকার ঋণের বোঝা ব্যাপক বেড়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বড় বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, আগামীতে আমেরিকায় মন্দা নেমে আসতে পারে। দেশটির অর্থনীতি মন্থর হয়ে যেতে পারে। ফলে সেখানে বিনিয়োগ থেকে সরে আসছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে দেশটিতে বেকারত্ব বেড়ে যাচ্ছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেনেথ রুগফ বলেন, সার্বিকভাবে আগামীতে মার্কিন ডলারের আধিপত্য হারানোর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, এর পতন আরো ঘটবে।