মোহাম্মদপুরে মা–মেয়ে হত্যা
যেভাবে সন্ধান মিললো গৃহকর্মীর
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৬ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে গৃহকর্মীর হাতে মা–মেয়ে হত্যার ঘটনার প্রায় ৬০ ঘণ্টা পর মূল আসামি আয়েশাকে স্বামী রাব্বিসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ‘ক্লুলেস’ এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে তেজগাঁও বিভাগ পুরনো চুরির তথ্য, ম্যানুয়াল সোর্স এবং একটি পুরনো মোবাইল নম্বরের সূত্রকে কাজে লাগানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মোহাম্মদপুর থানায় অতীতের বিভিন্ন মামলা ও জিডির তথ্য বিশ্লেষণ করে আয়েশাকে শনাক্ত করা হয়। পরে তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে এই তথ্য দেন অতিরিক্ত কমিশনার এন এস নজরুল ইসলাম।
তিনি জানান, ৮ ডিসেম্বর সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। তিন দিন আগে কাজে যোগ দেওয়া গৃহকর্মী ‘আয়েশা’কে সন্দেহভাজন আসামি করে নিহতের স্বামী আজিজুল ইসলাম মামলা করেন।
তবে তদন্তের বড় বাধা ছিল—আয়েশার কোনো ছবি, এনআইডি, পরিচিত নম্বর বা স্পষ্ট সিসিটিভি ফুটেজ না পাওয়া। বোরকা ও মুখ ঢেকে যাতায়াত করায় ফুটেজ থেকেও তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার জানান, ডিজিটাল ক্লু না পেয়ে তদন্ত দল ম্যানুয়াল সোর্সে যায়। গত এক বছরে গৃহকর্মীদের জড়িত চুরির ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়—গলায় পোড়া দাগ, জেনেভা ক্যাম্পে বসবাস এবং পূর্বের চুরির সঙ্গে আয়েশার বর্ণনা মিলে যাচ্ছে। এরপর মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডের এক ভুক্তভোগীর দেওয়া পুরনো মোবাইল নম্বরই তদন্তে মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
সিডিআর বিশ্লেষণে দেখা যায় নম্বরটি রাব্বি নামে একজন ব্যবহার করতেন। পরে নিশ্চিত হওয়া যায়—আয়েশা তার স্ত্রী। বাদীর বর্ণনার সঙ্গে মিল থাকায় তাদের খোঁজে হেমায়েতপুর, আশুলিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অবশেষে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার চরকায়া গ্রামে দাদা শ্বশুরবাড়ি থেকে আয়েশা ও রাব্বিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় আয়েশার কাছ থেকে চুরি করা একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যার দায় স্বীকার করে জানায়—কাজে যোগ দেওয়ার দ্বিতীয় দিনেই সে ২ হাজার টাকা চুরি করে। তৃতীয় দিনে বিষয়টি নিয়ে গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হয়। চতুর্থ দিনে সুইচগিয়ার চাকু লুকিয়ে আনে এবং টাকা চুরির কথা জানতে চাইলে লায়লা আফরোজকে পেছন থেকে ছুরি মারে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে হত্যা করে।
মায়ের চিৎকারে জেগে ওঠা নাফিসা এগিয়ে গেলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে আয়েশা। ইন্টারকম দিয়ে গার্ডকে খবর দিতে চাইলে ইন্টারকমের তার ছিঁড়ে ফেলে। এরপর রক্তমাখা পোশাক বদলে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে ব্যাকপ্যাকে ল্যাপটপ ও মোবাইল নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। সিংগাইর ব্রিজ থেকে মোবাইল ও পোশাক নদীতে ফেলে দেয়।
অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম জানান, আয়েশার এর আগেও চুরির ইতিহাস রয়েছে। এমনকি নিজের বোনের বাসা থেকেও টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করেছিল সে। হুমায়ুন রোডের একটি চুরির ঘটনায় থানায় তাকে আটকও করা হয়েছিল।
তিনি ঢাকাবাসীর উদ্দেশে বলেন, গৃহকর্মী রাখার সময় অবশ্যই তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে এবং পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে রাখতে হবে। কর্মীদের ঘনিষ্ঠভাবে বাসায় চলাফেরা করায় নিরাপত্তার স্বার্থে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ ইবনে মিজান, মোহাম্মদপুর জোনের এএসপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, মোহাম্মদপুর থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
