শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২৯ এএম
ছবি : সংগৃহীত
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ৭টার পর তিনি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক দিনগুলোর একটি। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর, বিজয়ের একেবারে প্রাক্কালে জাতি হারায় তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্নে যখন গোটা দেশ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখন স্বাধীনতাবিরোধী চক্র রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে সংগঠিতভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ চালায়।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র দুই দিন আগে, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, লেখক, শিল্পী, প্রকৌশলী, আইনজীবী ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা—এমন বহু কৃতী মানুষকে চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখা হয় মিরপুর ও রায়েরবাজারের ডোবা-নালা ও ইটখোলায়।
পরদিন সকালে এসব স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা নিথর দেহ দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা জাতি। কারও শরীর ছিল বুলেটবিদ্ধ, কারও দেহ অমানবিক নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত। অনেকের হাত পেছনে বাঁধা অবস্থায় বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার উষালগ্নে স্বজন হারানোর সেই বেদনার খবর পুরো জাতিকে শিউরে তুলেছিল।
হত্যার আগে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ওপর চালানো নির্যাতনের তথ্যও পরবর্তীতে উঠে আসে। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সংকলন, বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদন এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ সাময়িকী নিউজউইক-এ সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখায় জানা যায়, নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট এক হাজার ৭০ জন।
দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামে এসব বুদ্ধিজীবী তাদের মেধা, মনন ও লেখনীর মাধ্যমে স্বাধীনতার আন্দোলনে প্রেরণা জুগিয়েছেন এবং জাতিকে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে উদ্দীপ্ত করেছেন। স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির কাছে ছিল অসহনীয়, যার ফলেই এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়।
যদিও ১৪ ডিসেম্বরকে বুদ্ধিজীবী হত্যার দিন হিসেবে স্মরণ করা হয়, তবে ইতিহাসবিদদের মতে এই ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের সূচনা হয় ১০ ডিসেম্বর থেকে। ওই সময় রাতের আঁধারে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুরে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৯১ সালে রায়েরবাজারে আরেকটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়, যা ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয়।
প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর শোকাবহ পরিবেশে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়। এদিন সারা দেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং বিভিন্ন স্থানে শোকের প্রতীক কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
