জাতীয় কবির প্রয়াণ দিবস আজ
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৪৯ এএম
					জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বাংলা ১৩৮৩ সালের এই দিনে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় চিরবিদায় নেন তিনি। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবিকে সমাহিত করা হয়।
দিনটিকে স্মরণ করতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিল্পী-সাহিত্যিক সমাজ নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ঢাকার বাইরে দেশজুড়েও নজরুল স্মরণে আয়োজন করা হয়েছে সাহিত্য পাঠ, সেমিনার, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও বিশেষ সভার।
১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৪ মে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নজরুল। ছোটবেলায় তার ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। পিতা কাজী ফকির আহমেদ ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও মাযারের খাদেম, মা জাহেদা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। দরিদ্র সংসারে জন্ম নিয়েও নজরুল ছোটবেলা থেকেই সংগীত, কবিতা ও নাটকের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি একসময় লেটো দলে গান গাইতেন ও নাটকে অভিনয় করতেন।
আরো পড়ুন : হার মানিয়েছেন রবার্ট ব্রুসকে: ‘সুখবর বাংলাদেশ’-এর পাতায় সুলতানের গল্প
কাজী নজরুল ইসলাম কেবল কবি নন, তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রবন্ধকার, সাংবাদিক, গীতিকার, সুরকার, সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা।
তার কবিতা, গান ও গদ্যে প্রেম, দ্রোহ, মানবতা, সাম্য ও অসাম্প্রদায়িকতার বার্তা ফুটে উঠেছে। তিনি সাম্রাজ্যবাদ ও শোষণের বিরুদ্ধে নির্ভীক কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নজরুল ৩,০০০-এরও বেশি গান লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন, যা নজরুল সঙ্গীত নামে অমরত্ব পেয়েছে। তার রচিত অসংখ্য রাগ-রাগিণী বাংলা সংগীতকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
নজরুল সবচেয়ে বেশি পরিচিত বিদ্রোহী কবি হিসেবে। তার বিখ্যাত কবিতা “বিদ্রোহী” ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠে। তিনি কলম ও গান দিয়ে শোষণ, বঞ্চনা ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তার লেখনী হিন্দু-মুসলমান মিলনের বার্তা দিয়েছে, জাতিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত করেছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নজরুলের গান ও কবিতা মুক্তিকামী জনতাকে অনুপ্রাণিত করে। তার “চল চল চল” গানটি বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর মার্চিং সংগীতে পরিণত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রেডিওতে তার অসংখ্য গান সম্প্রচারিত হয়ে মুক্তিকামী জনতার মনোবল জুগিয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৪ মে নজরুলকে সপরিবারে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তাকে দেওয়া হয় জাতীয় কবির মর্যাদা। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করে। একই বছরে তাকে একুশে পদক প্রদান করা হয়।
বাংলা সাহিত্য ও সংগীতে নজরুল চেতনা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। তার সৃষ্টিকর্ম স্বাধীনতা, মানবাধিকার, সাম্য ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনের অনুপ্রেরণা জোগায়। তার কবিতা ও গান শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বাংলা ভাষাভাষী সমাজে আলো জ্বালিয়ে রেখেছে।
আজকের এই দিনে জাতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে বাংলার চিরবিদ্রোহী, প্রেম ও মানবতার কবি নজরুল ইসলামকে।
	
																	
																	
																	
																	
																	
																	
																	
																	
																	
																	