স্বাধীন বাংলা ফুটবলের দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টুর মৃত্যুতে ক্রীড়াঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সোমবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানী একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন কিংবদন্তি এই ফুটবলার (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তিনি এক পুত্র, ৩ কন্যাসহ আত্মীয় স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। 

জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে তার প্রিয় ক্লাব মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। তার প্রতি সম্মান জানিয়ে ক্লাবের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।

দেশের আরেক ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ঢাকা আবহানি লিমিটেড, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে), বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ), বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশন, বাংলাদেশ রাগবি ফেডারেশন জাকারিয়া পিন্টুর মৃত্যুতে ভিন্ন ভিন্ন বার্তায় শোক ও তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।

আগামীকাল সকাল ১০টায় মতিঝিলস্থ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব প্রাঙ্গণে পিন্টুর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

রবিবার সন্ধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পিন্টু। আরো কিছু গুরুতর শারীরিক সমস্যা ধরা পড়ায় তাকে সিসিইউতে রাখা হয়েছিল। সোমবার দুপুর পৌনে ১২টায় সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের শীর্ষ ফুটবলাররা গঠন করেছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। দেশের মানুষের মুক্তির পক্ষে বিশ্বজনমত তৈরি করেছিল এই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। জাকারিয়া পিন্টু ছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের গর্বিত অধিনায়ক। জাকারিয়া পিন্টু একজন অসাধারণ ডিফেন্ডার ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক হিসেবে অমর হয়ে থাকবেন বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসেও।

মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল জাকারিয়া পিন্টুর নেতৃত্বে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ১৬টি ম্যাচে অংশ নিয়েছিল। এর ১২টিতেই জিতেছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। ওই ম্যাচের টিকিট বিক্রির অর্থ স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল তুলে দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের তহবিলে।

১৯৭৩ সালে মালয়েশিয়ার মারদেকা কাপে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলকে নেতৃত্ব দেন জাকারিয়া পিন্টু। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলেরও প্রথম অধিনায়ক। মোহামেডানের সাবেক এই তারকা সংগঠন হিসেবেও মোহামেডানের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন।

১৯৪৩ সালের ১ জানুয়ারি নওগাঁয় জন্ম নেওয়া এই কিংবদন্তির ফুটবলের শুরু পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত টানা খেলেছেন মোহামেডানে। সেই ক্লাবের কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে এই ক্লাবেরই পরিচালক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার ও ১৯৭৮ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেয়েছেন পিন্টু।