শেখ হাসিনার সঙ্গে আসামি হলেন ২৫ জন সাংবাদিকও

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো ৩টি পৃথক হত্যা মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ২৫ সাংবাদিক, সাবেক মন্ত্রী, পুলিশ প্রধান ও ব্যবসায়ীদের আসামি করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ও এর আগের দিন বুধবার দেশের বিভিন্ন আদালতে মামলাগুলো করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর মিরপুরে মো. ফজলু হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৬৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় গত বুধবার। যেখানে ২৫ জন সাংবাদিককেও আসামি করা হয়েছে। ভাসানটেক থানার ওসি ফয়সাল আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ভুক্তভোগীর বড় ভাই মো. সবুজ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জুনায়েদ আহমেদ পলক, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহাবুব উল আলম হানিফ, বাহাউদ্দিন নাসিম ও মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ ১৬৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ, বিপ্লব কুমার সরকারকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। আসামির তালিকায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তার ছেলে, গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের নামও রয়েছে।
সাংবাদিকদের মধ্যে নঈম নিজাম, মনজুরুল আহসান বুলবুল, শ্যামল দত্ত, ফরিদা ইয়াসমিন, ওমর ফারুক, মনজুরুল বারী নয়ন, সোহেল হায়দার চৌধুরী, কুদ্দুস আফ্রাদ, অরুন কুমার দে, জিহাদুর রহমান জিহাদ, আব্দুল মজিদ, সাজ্জাদ আলম খান তপু, সৈয়দ শুক্কুর আলী শুভ, হায়দার আলী, আলমগীর হোসেন, মাইনুল আলম, জায়েদুল আহসান পিন্টু, কবির আহমেদ খান, নুরুল ইসলাম হাসিব ও শাহনাজ শারমিনের নাম রয়েছে আসামির তালিকায়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তার ভাইকে ঘটনাস্থলের পাশে মার্কস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান। পরে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে তাকে দাফন করা হয়।
অন্যদিকে, প্রায় এক যুগ আগে সাভারে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলমকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেকে পুলিশ প্রধান হাসান মাহমুদসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস এম সাইফুল ইসলামের আদালতে ভুক্তভোগী নিজেই মামলার আবেদন করেন। এ সময় আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করে অভিযোগটি সাভার মডেল থানাকে এজাহার হিসেবে নেয়ার নির্দেশ দেন।
মামলার বাকি আসামিরা হচ্ছেন- তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, ভোলা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ঢাকা রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, তৎকালীন পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান ও সাভার মডেল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে নাজিম উদ্দিন আলমসহ নেতাকর্মীরা আমিনবাজার ব্রিজের ওপর অবস্থান করছিলেন। পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয়। লাঠিপেটা ও গুলি চালায়। পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল ও শর্টগানের গুলিতে নাজিম উদ্দিন আলমসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন।
এছাড়াও বগুড়ায় রিকশাচালক আব্দুল মান্নান নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২২ জনের নাম উল্লেখ করে ৪২২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয় গত বুধবার। নিহতের ছেলে রানা হামিদ গত বুধবার রাতে সদর থানায় এ মামলা করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ এ তথ্য দিয়েছেন। এ নিয়ে বগুড়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ৪টি হত্যা ও একটি হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের হলো।
বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, গত ৪ আগস্ট দুপুরে শহরের বড়গোলা ট্রাফিক মোড় এলাকায় ছাত্র-জনতার একদফার আন্দোলনে এসে আবদুল মান্নান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তিনি বগুড়া সদরের বানদীঘি এলাকার বাসিন্দা। মামলায় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইনু-মেনন-পলক ও মামুন কারাগারে : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিভিন্ন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পৃথক ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আত্মসমর্পণ করলেও বাকিদের অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তারা একাধিক মামলায় রিমান্ডে থাকার পর আদালত তাদের গতকাল কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। তবে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুননকে কারাগারে পাঠানোর আগে আরো ৪ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।