×

বিনোদন

দাম্পত্য জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন গুলতেকিন

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩২ পিএম

দাম্পত্য জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন গুলতেকিন

হুমায়ূন আহমেদ ও গুলতেকিন খান। ছবি: সংগৃহীত

প্রখ্যাত লেখক হুমায়ূন আহমেদকে বিয়ে করেছিলেন গুলতেকিন খান। কিন্তু বিয়ের পর দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে পারেননি। অতীত স্মৃতি মনে করে সে তিক্ত অভিজ্ঞতা ফেসবুকে শেয়ার করেছেন প্রাক্তন স্ত্রী গুলতেকিন খান।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) নিজের ফেসবুক পোস্টে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে বিবাহিত জীবনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে আফসোস করেন গুলতেকিন। প্রথমেই তিনি জানান, তার এ পোস্ট  কিশোরী, তরুণী এবং তাদের অভিভাবকদের জন্য।

স্ট্যাটাসে বিবাহিত জীবনে যুক্তরাষ্ট্রে এক শীতার্ত রাতের ঘটনা উল্লেখ করেন গুলতেকিন। অল্প বয়সে আর কোনো মেয়ে তার মতো ভুল যেনো না করে, সে বার্তাও দেন এ লেখিকা।

পাঠকের জন্য গুলতেকিন খানের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-

এই লেখাতে আমার সম্পর্কে একটিও খারাপ মন্তব্য দেখতে চাই না! এই সত্যি কথাগুলো আমি লিখেছি শুধুমাত্র কিশোরী, তরুণী এবং তাদের অভিভাবকদের জন্যে। এত ব‍্যক্তিগত ঘটনা লিখেছি, কারণ আর কোনো মেয়ে আমার (পুরো বিয়েটাতে আমার চেয়ে অভিভাবকদের বেশি ভুল ছিল) মতো ভুল যেন না করে।

জুন মাসের ৬ তারিখ ছিল রোববার। শীলাকে যেমন হাসতে হাসতে বলেছিলাম, প্রায় একইভাবে ইকবাল ভাইকেও জানালাম। ড. ইয়াসমীন হক তার পরিচিত কয়েকজন লয়‍্যারর আমার বাসায় পাঠান। তাদের একজন আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ব‍্যাংকে টাকাপয়সা কেমন আছে?

আমি বলি, কার ব‍্যাংকে? 

আপনাদের জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে? 

আমাদের তো কোনো জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে নেই! 

ব‍্যাংকে হুমায়ূন আহমেদের কত টাকা আছে?

সেটা তো আমি জানি না

তখন উনি আপসেট হয়ে বলেন, কিছু একটা বলেন?

আমি বলি, একজন মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে!

কী ধরনের সম্পর্ক?

যত দূর জানি সব ধরনের সম্পর্ক। উনি নিজেই আমাকে জানিয়েছেন! আমি বাকি কারও নাম বললাম না! তারা এখন বিয়ে করে শান্তিতে আছেন। কী দরকার তাদের নাম বলার!

লয়‍্যাররা দখিন হাওয়ায় (আমার ফ্ল্যাটে যেখানে আমার মৌখিক এগ্রিমেন্ট নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ থাকছিলেন) সেখানে যান। এবং চলেও আসেন আমার কাছে। একজন বলেন, তিনি তো কয়েকটি বই দেখান, যেখানে আগে থেকেই আন্ডার লাইন করা ছিল।

: হোটেল গ্রেভারিন, মেফ্লাওয়ার আরো কিছু বই। আপনি নাকি অনেক আগে থেকেই ডিভোর্স চাচ্ছিলেন?

: ওগুলো সত্যি না। ডিভোর্সের নিয়ম আমি এখনো জানি না! আমেরিকাতে কীভাবে জানবো?

‘হোটেল গ্রেভারিনে’ ওসব বানিয়ে লেখা! তার আত্মজীবনীমূলক বই এ অনেক কিছুই তার কল্পনা থেকে লেখা। ওই সব বই লেখার সময় আমি তাকে বারবার বলেছিলাম ওসব না লিখতে! কিন্তু উনি আমাকে তখন বলেছিলেন, একদম সত্যি হচ্ছে জলের মতো, কোনো স্বাধহীন, তাই কিছু মিথ‍্যা থাকলে লোকজন পড়ে মজা পাবে!

আমি শুধু তার পায়ে ধরে বাকি রেখেছিলাম। বারবার বলেছি, আমার সম্পর্কে কিছু না লিখতে। আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাইনি! ওর তখন খারাপ একটি সময় যাচ্ছিল, নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডির জন্য একটি পরীক্ষা হয়, যার নাম কিউমিলিয়েটিভ, সেখানে দশ নম্বর থাকে।

পরীক্ষার জন‍্য সম্ভবত দুই বছর সময় থাকে। সেখানে অনেকগুলো পরীক্ষা হয় এবং দশের মধ‍্যে তিনটি ২ নম্বর পেতে হয়, বাকিগুলো ১ নম্বর পেলেই হয়। কিন্তু সে অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়েও একটিতেও ২ নম্বর পাননি তখনো।

এটা নিয়ে তার মধ্যে ফ্রাসটেশন কাজ করছিল। তা ছাড়া তিনি রেগে গেলেই বলতেন, বাসা থেকে বের হয়ে যাও। সেদিনও পরীক্ষায় ১ পেয়ে মেজাজ খুব খারাপ ছিল। বাসায় এসেই অকারণে রাগারাগি শুরু করেন এবং একপর্যায়ে কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে বলেন, বাসা থেকে বের হয়ে যাও!

আমি বলি কোথায় যাব? উনি বলেন, যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাও! আমাকে চুপচাপ কাঁদতে দেখে আরও রেগে যান এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেন।

আমার গায়ে তখন একটি শার্ট এবং প‍্যান্ট, পায়ে স্পন্জের স‍্যান্ডেল ছিল। আর বাইরে ডিসেম্বর মাসের প্রচণ্ড ঠান্ডা! আমি শীতে কাঁপতে কাঁপতে দরজা ধাক্কা দিই আর বলি, দরজা খোলো প্লিজ, কলিংবেল বাজাতে থাকি কিন্তু দরজা খুলে না।

বেশ কিছুক্ষণ পরে আমার হাত–পা প্রায়  জমে যায়! তখন দৌড়াতে থাকি। আমাদের বাসার কাছে একটি দোকান ছিল। একজন আমেরিকান বৃদ্ধা মহিলা তাঁর বিশাল ড্রয়িং রুমকে নানা রকম মসলা, আচার, হারবাল জিনিস দিয়ে দোকান বানিয়েছিলেন। নাম ছিল ‘টচি’।

আমরাও ওখান থেকে মশলা কিনতাম এবং প্রায়ই যেতাম নতুন কোনো মশলার খোঁজে! এমনিতে কাছেই মনে হতো কিন্তু সে শীতের সন্ধ্যায় যেন দোকানটি বাসার কাছে ছিল, সেটি মনে হলো বহু দূরে চলে গেছে! শেষ পর্যন্ত টচি পৌঁছেই দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। মনে হলো স্বর্গে ঢুকেছি!

বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে অনুরোধ করলাম, আমি একটি ফোন করতে পারি কি না! টাকা পরে দেব! উনি বললেন, টাকা লাগবে না, তুমি ফোন করো। তিনি আমার প্রাইভেসির জন‍্যে একটু দূরে সরে গেলেন। আমার একমাত্র মুখস্থ নম্বরে ফোন করলাম।

: এ্যান, আমি টিংকু বলছি।

কী হয়েছে টিংকু, এমনভাবে কথা বলছ কেন?

: এ‍্যান, তুমি কি আমাকে একটু তুলে নিতে পারবে?

আমি (এ‍্যানের ছেলে, এ‍্যারোনকে আমি বেবিসিট করি। কিন্তু আমরা ভালো বন্ধুও)

ওকে ঠিকানা বলি।

এ‍্যান চলে আসে। আমি টচির বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে গাড়িতে উঠি। ও আমাকে একটি জ‍্যাকেট দেয়। আমি ভাবি, ও কেমন করে জানলো যে আমার গায়ে জ‍্যাকেট নেই?

ওর বাড়িতে যেতে যেতে সবকিছু বলি ওকে।

বাসায় পৌঁছে এ‍্যান আমাকে একটি রুম দেখিয়ে বলে, এখন তুমি ঘুমাওতো!

সারা দিন কাজ করার ক্লান্তি, বাসা পরিষ্কার, রান্না কত কী করেছি! কোনো কিছুতেই ঘুম আসে না! ভয়ে, উৎকণ্ঠায় এতক্ষণ কাঁদতেও পারিনি! বালিশে মাথা রাখতেই ঝর্ণার মতো দুচোখের জলে বালিশ ভিজে গেল!

 নোভার কথা ভেবে কষ্ট গলার ভেতর আটকে গেল! এখানে আমার মা-বাবা, ভাইবোন, কোনো আত্মীয়স্বজন নেই! কী করে সে পারল এমন করতে? সারা রাত কাঁদতে কাঁদতে কাটলো।

বাথরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে আমি বসে থাকি।

এ‍্যান আর স্টেইনলি নাশতার টেবিলে এসে  বসে। আমিও বসি ওদের সাথে।

টেবিলে এ‍্যান বলে, কী ঠিক করলে?

: কী বলছ, এ‍্যান?

: লয়‍্যারের সাথে কথা বলব না? একবারে ডিভোর্স পাঠাতে বলবে?

আমি ভয়ে আঁতকে উঠি! না, না। হুমায়ূন আমাকে অনেক ভালোবাসে! রাগের মাথায় ওসব করেছে! তুমি আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসতে পারবে? নোভার জন‍্য খুব মন খারাপ লাগছে!

ওরা দুজন অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে থাকে। বাসায় ঢুকেই আমি নোভাকে কোলে নিয়ে দোতলায় যাই। বিছানায় বসে নোভাকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কাঁদতে থাকি। আর বলি, নোভাকে আমার বোকামি করতে দেবো না।

ওর হাজব্যান্ডের যেন সাহস না হয় ওকে ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেবার! আমার চোখের সামনে অসংখ‍্য ছবি দেখতে পাই, যেখানে একটি ১৮–১৯ বয়েসের তরুণী চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে এবং একজন হুমায়ূন আহমেদ তাকে যা ইচ্ছে তা বলে বকছে।

আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল ইয়াসমীনের পাঠানো ওই লয়্যারকে জিজ্ঞেস করতে, ‘আসলে তখনই নোভাকে নিয়ে দেশে ফিরে ওই ভদ্রলোককে ডিভোর্স দেয়া উচিত ছিল, তাই না?’ কিন্তু পারিনি!

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

রোববার থেকে সচিবালয়ে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ

রোববার থেকে সচিবালয়ে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ

রাশমিকা–বিজয়ের বাগদান সম্পন্ন, শিগগিরই বিয়ে

রাশমিকা–বিজয়ের বাগদান সম্পন্ন, শিগগিরই বিয়ে

ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ইরানে ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড

ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ইরানে ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড

বিসিবির নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন আরেক প্রার্থী

বিসিবির নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন আরেক প্রার্থী

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App