খালিস্তানিদের ইস্যু নিয়ে ভারত-কানাডা সম্পর্কের পারদ ক্রমেই ঊর্ধ্বগামী  হচ্ছে।  শুক্রবার (১ নভেম্বর) ডেকে পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে অবস্থানকারী কানাডার কূটনীতিককে। কারণ, কানাডা সরকার খলিস্তানপন্থী সন্ত্রাসী হরদীপ সিং নিজ্জর খুনের ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নাম জড়ানো। অমিত শাহ দেশটির শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লক্ষ্য করে হিংসা ছড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে কানাডার এক মন্ত্রী ডেভিড মরিসনের করা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে নয়াদিল্লি। 

 মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) কানাডার উপ-পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড মরিসন দেশটির জননিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বলেছিলেন, কানাডায় বসবাসরত খালিস্তানপন্থীদের নিশানা বানিয়ে সহিংসতা, ভীতি প্রদর্শন এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছিলেন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

শুক্রবার(৩০ অক্টোবর) এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, শুক্রবার কানাডিয়ান হাইকমিশনের একজন প্রতিনিধিকে তলব করা হয়েছিল এবং তার কাছে একটি কূটনৈতিক নোট হস্তান্তর করা হয়েছে। রণধীর জয়সওয়াল বলেন, নোটে জানানো হয়েছে,উপমন্ত্রী ডেভিড মরিসনের কমিটির কাছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোলা অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন অভিযোগের কঠোর প্রতিবাদ জানায় ভারত সরকার।

অমিত শাহর বিরুদ্ধে তোলা কানাডার অভিযোগের বিষয়ে প্রথমে সংবাদ পরিবেশন করেছিল মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। ওয়াশিংটন পোস্টকে অমিত শাহর নাম নিশ্চিত করার তথ্য জানিয়েছেন ডেভিড মরিসন। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এটা প্রমাণ করে যে, উচ্চপদস্থ কানাডীয় কর্মকর্তারা ইচ্ছাকৃতভাবে গণমাধ্যমে ভিত্তিহীন দাবি ফাঁস করেছেন। জয়সওয়াল সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ভারত ও কানাডার সম্পর্কের জন্য গুরুতর পরিণতি ডেকে আনবে।

ভারত শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সন্ত্রাসী দাবি করে ও দেশের নিরাপত্তার জন্য তাদের হুমকি হিসেবে মনে করে। তবে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভারতের ভূখণ্ডে খালিস্তান নামে একটি স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করে আসছেন। ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে ভারতে এক বিদ্রোহে কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই সময়কালের মধ্যে ১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গাও রয়েছে। শিখ দেহরক্ষীদের হাতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পর হাজার হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছিল। নিরাপত্তাবাহিনীকে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বের করে দেয়ার জন্য পবিত্র শিখ মন্দিরে হামলা চালানোর নির্দেশ দেয়ার পর দেহরক্ষীর হাতে নিহত হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।

এর আগে, কানাডা চলতি অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়। কানাডার মাটিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারকে ২০২৩ সালের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এই পদক্ষেপ নেয় কানাডা প্রশাসন । জবাবে ভারতও কানাডার কূটনীতিকদের বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে।

এই ঘটনার পরেও দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয়  এখন আর স্বাভাবিক হবে কি না  সেই প্রশ্নের উত্তর এখনই দেয়া কঠিন হবে।