ঘুষ, জালিয়াতি এবং আস্থা ভঙ্গের অভিযোগে করা দুর্নীতির মামলায় প্রথমবারের মত আদালতে হাজিরা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৭ সালে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ইসরায়েলের পুলিশ। এরপর ২০১৯ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) প্রায় ৫ বছর পর তিনি আদালতে হাজিরা দেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মোট তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একটি মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি তার ধনকুবের বন্ধুদের কাছ থেকে উপহার নিয়েছেন এবং তাদের পক্ষে ইতিবাচক সংবাদ প্রচারের বিনিময়ে মিডিয়া টাইকুনদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন। তবে নেতানিয়াহু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এগুলো তার বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’।

অন্য আরেকটি মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, নেতানিয়াহু ও তার স্ত্রী হলিউডের প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আর্নন মিলচানের কাছ থেকে প্রায় দুই লাখ মার্কিন ডলারের চুরুট, শ্যাম্পেন এবং অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী নিয়েছেন।

আদালত থেকে জানানো হয়েছে ঘুষ, জালিয়াতি এবং আস্থা ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে প্রতি সপ্তাহে তিন দিন আদালতে সাক্ষ্য দিতে হবে।

নেতানিয়াহুর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর আগে তার আইনজীবী অমিত হাদাদ বিচারকদের জানান, এই মামলার ভিত্তিতে মৌলিক ত্রুটি রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘প্রসিকিউটররা কোনো অপরাধের তদন্ত করেননি বরং একজন ব্যক্তির পেছনে ছুটেছেন।’

আরো পড়ুন : গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরো ২৮ ফিলিস্তিনি

সাক্ষ্য দেয়ার সময় নেতানিয়াহু বলেন, সত্য বলার জন্য—আমি আট বছর ধরে অপেক্ষা করছি। সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই অভিযোগ আমাকে হতবাক করেছে। আমি একজন প্রধানমন্ত্রী, একটি দেশ পরিচালনা করছি এবং দেশকে রক্ষায় যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছি। আমি আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত নই বরং ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।

এই বিচার ইসরায়েলের গণতন্ত্রের একটি পরীক্ষা বলে মনে করছেন নেতানিয়াহুর সমালোচকরা। তারা দেখতে চান, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কোনো অপরাধ করলে তিনি জবাবদিহি করতে বাধ্য হন কিনা।

অন্যদিকে, এটি গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন নেতানিয়াহুর সমর্থকরা। বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে উদারপন্থী গোষ্ঠী নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছে বলে তাদের অভিযোগ।

নেতানিয়াহুর সমর্থনে উপস্থিত একজন আইনপ্রণেতা তালি গোতলিভ আদালতে চিৎকার করে বলেন, এটি লজ্জাজনক। অপর একজন মন্ত্রী ইতমার বেন-গভির নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ‘নির্যাতন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

উল্লেখ্য, গত ২১ নভেম্বর নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্তের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।