মতিউরের সঙ্গে স্পর্শকাতর অডিও রেকর্ড ফাঁস, যা বললেন সেই বান্ধবী আরজিনা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:২১ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত ও সমালোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের এবার এক বান্ধবীর সন্ধান পাওয়া গেছে। মতিউরের অধস্তন কর্মকর্তা ছিলেন আরজিনা খাতুন নামের এই নারী। বান্ধবী পরিচয়ে নানা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তিনি ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ বনেছেন। বাগিয়েছেন অঢেল সম্পদ।
ঢাকায় অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট, গ্রামে বিলাসবহুল বাড়ি, ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকারসহ নামে-বেনামে গড়েছেন বিপুল সম্পদ। আরজিনার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের অভিযোগ গড়িয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পর্যন্ত।
ছোট ছোট বাক্যে আবেগধর্মী ও স্পর্শকাতর ওই কথোপকথন পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
মতিউর : ‘তোমার কাছে...চাই, কখন দিতে পারবা?
আরজিনা : আজকে...!
মতিউর : আজকের প্রোগ্রাম ঠিক আছে?
আরজিনা : আজকে...কালকে যাই। আজ শুক্রবারতো, মানে কি বলে বের হব, কোনো ইয়ে পাচ্ছি না। বাসায় আছেতো। কালকে হলে ভালো হয়। কালকেতো থাকবা ঢাকায়।
মতিউর : দীর্ঘশ্বাস...ঠিক আছে। কালকে মনে হয় পারব না।
আরজিনা : কষ্ট পেলে...মানে শুক্রবারতো, কোনো ইয়ে খুঁজে পাচ্ছি না। বাইরে যে থাকব, আবার মাইন্ড... মানে যদি কোনো সন্দেহ তৈরি হয়।
মতিউর : ফের দীর্ঘশ্বাস...ওকে।
জানা গেছে, মতিউর রহমানের সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে নানা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন এনবিআরের ওই আরজিনা খাতুন।
আরো পড়ুন: অবশেষে যা বললেন বিতর্কিত মতিউরের স্ত্রী লাকী
রাজধানীতে বিলাসবহুল ইন্টেরিয়রে মোড়ানো ফ্ল্যাট, গ্রামে আলিশান বাড়ি, পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে জমিসহ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন এনবিআরের ওই আরজিনা খাতুন। মাত্র ৩ বছরে আরজিনা কিনেছেন অন্তত ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার। যার ২০০ ভরিই চোরাচালানের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আনা হয়েছে বলে দুদকের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। আরজিনা খাতুন বর্তমানে রাজস্ব বোর্ডের মূসক মনিটরিং, পরিসংখ্যান ও সমন্বয়ের দ্বিতীয় সচিব। এর আগে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপকমিশনার ছিলেন তিনি।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ১০ জুন আরজিনার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের খতিয়ান তুলে ধরে দুদকে অভিযোগ জমা দেন এক ব্যক্তি। তাতে বলা হয়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য আমদানি, মানি লন্ডারিং, স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ আর আলোচিত এনবিআরের সদ্য সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের সংস্পর্শে এসে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন আরজিনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর মিরপুরে প্রায় ২ হাজার বর্গফুটের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে তার। ১ কোটি ৩০ লাখ টাকায় কেনা ফ্ল্যাটটিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। কিন্তু রেজিস্ট্রেশনসহ দলিলে ফ্ল্যাটটির দাম দেখানো হয়েছে মাত্র ৬৮ লাখ। ফ্ল্যাটটি কেনার জন্য তিনি ২০২০ সালে ব্যাংক ঋণ নেন। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঋণ নেয়ার ১ বছর আগেই ফ্ল্যাট কিনে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন। তাও ঋণের টাকার দ্বিগুণ দামে। প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ করে বাসায় বিলাসবহুল আসবাব ও অত্যাধুনিক ইন্টেরিয়র করেছেন।
আরো পড়ুন: অঢেল সম্পদের মালিক মতিউরের বান্ধবী কে এই আরজিনা?
আরজিনার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর নারোয়া ইউনিয়নের তালুতপারা গ্রামে। কাস্টমসে চাকরির ৩ বছরের মধ্যে গ্রামের ছন আর টিনের বাড়িটিকে বদলে করেছেন আলিশান এক ভবন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে বদলির পর ২০২২ সালেই গ্রামে তার পরিবারের সদস্যদের নামে কিনেছেন ৫টি জমি। যার বাজারমূল্য অর্ধকোটি টাকা। এছাড়াও গ্রামে আরও প্রায় এক কোটি টাকার জমি বন্ধক নিয়েছেন আরজিনা।
তার ঘনিষ্ঠজনরা জানান, আরজিনার ব্যবহৃত বেশিরভাগ গহনাই অনেক দামি। তার অন্তত ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের হীরার গহনা রয়েছে।২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তিনি অন্তত ৫০০ ভরি স্বর্ণ আর ডায়মন্ডের অলংকার কিনেছেন নগদ টাকায়।
২০২২ থেকে শেয়ার ব্যবসাও করেছেন তিনি। এক দিনে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগে দ্বিগুণ লাভের নজিরও আছে তার। তার তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল নগদ টাকা ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগও আছে।
অভিযোগ আছে-মতিউর রহমানের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে জড়ানোর পর থেকে ‘আলাদিনের চেরাগ’ হাতে পান আরজিনা। তরতর করে বাড়তে থাকে তার সম্পত্তি। মতিউরের সঙ্গে একই ব্রোকারেজ হাউজে শেয়ার ব্যবসায় বিনিয়োগ ছিল আরজিনার।
আরো পড়ুন: ছাগলকাণ্ড: মতিউর ও তার পরিবারের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ
অভিযোগ আছে, কারসাজি করে মতিউরই আরজিনাকে শেয়ার বাজারে মুনাফা তুলে দেন।
মতিউর-আরজিনার মোবাইল ফোনালাপে স্পর্শকাতর অশ্লীল কথাবার্তার ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আরজিনা খাতুন বলেন, ‘আমি আসলে ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার এক্স হাজবেন্ড একটা মামলা করেছেন, আমি একটা করেছি। আসলে সব মিলিয়ে আমি খুব বিপর্যস্ত। আমি তাকে ডিভোর্স দিয়েছি, তাই উনি ক্ষিপ্ত হয়ে এগুলো করছেন। পারিবারিক বিরোধের জের ধরেই একটি মহল এই চক্রান্ত করছে।’