এবতেদায়ী মাদ্রাসাকে জাতীয়করণের ঘোষণা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪০ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের ছয় দফা দাবি মেনে নিয়ে ১৫১৯টি মাদ্রাসাকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়েছেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব এস এম মাসুদুল হক।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) শাহবাগে অবস্থানরত শিক্ষকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি বলেন, সকল এবতেদায়ী মাদ্রাসাকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করা হবে। ছয় দফার সব মেনে নেয়া হয়েছে। ২০২৫ সাল থেকে আমরা এমপিওর কাজ শুরু করব।
এর আগে সচিবালয়ে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আন্দোলনকারীদের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে মাসুদুল বলেন, আপনাদের প্রথম দফাতে জাতীয়করণের যে দাবি ছিল, আমরা সকলের সঙ্গে কথা বলে একমত হয়েছি যে- বাংলাদেশের সকল স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণ করা হবে। দ্বিতীয় দাবি ছিল, স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার রেজিস্ট্রেশনের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা, আমরা ২০২৫ সালে এবতেদায়ী মাদ্রাসার যে এমপিওভুক্তির তালিকা করেছি তা পর্যালোচনার পর্যায়ে আছে।
আমরা ৩১ জানুয়ারির মধ্যে এটা দাখিল করতে বলেছি এবং মার্চ মাসের মধ্যে আমরা চালু করব এবং স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হবে। তিন নম্বর ছিল, রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত কোডবিহীন মাদ্রাসাগুলোকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অন্তর্ভুক্তকরণ, এটা আমরা ২০২৫ সালের জুন থেকে করব।
মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের এ যুগ্ম সচিব বলেন, চার নম্বরে ছিল, স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা বেতনভাতা নীতিমালা ২০২৪ অনুমোদন করা; আমরা নীতিমালা ২০২৫ ইতোমধ্যে প্রস্তুত করেছি, ফাইনাল খসড়া ৩১ মার্চের মধ্যে অনুমোদন করে চালু করব।
পাঁচ নম্বর ছিল, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় অফিস সহায়ক নিয়োগ করা, আমাদের ঘোষণাপত্রে অফিস সহায়কের পদ সৃষ্টি হবে। ছয় নম্বরে ছিল, প্রাথমিকের মতো প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু করা। আমরা প্রাক প্রাথমিক চালু করার জন্য ইতোমধ্যে নীতিমালা ২০২৫ এ অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছি, প্রাক প্রাথমিকের জন্য একজন শিক্ষকেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অনুদানভুক্ত মাদ্রাসাগুলোকে কোন প্রক্রিয়ায় জাতীয়করণ করা হবে- জানতে চাইলে যুগ্ম সচিব এস এম মাসুদুল হক বলেন, আগে এমপিওভুক্তি করে তারপরে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয়করণ করতে হবে। একটা আইন করতে হবে, তখন জাতীয়করণ করা হবে। এমপিওভুক্তির কাজ চলতি বছরের জুন থেকে শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আর জাতীয়করণ শুরু হবে ২০২৬ এবং ২০২৭ এর মধ্যে মোটামুটি সব কার্যক্রম সমাপ্ত হবে। জাতীয়করণ হলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে কী ধরনের সুবিধা মিলবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে মাসুদুল হক বলেন, উপবৃত্তি চালু হবে, মিড ডে মিল এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুরু হবে।
যুগ্ম সচিবের বক্তব্যের পরে আনন্দ-উল্লাস করতে থাকেন আন্দোলনে থাকা শিক্ষকরা। কেউ কেউ খুশিতে কাঁদতে শুরু করেন। আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য বাগেরহাটের কোড়ামারা হিফজুল কোরআন স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষক সামসুল হক আনসারী খুশিতে কাঁদছিলেন। তিনি বলেন, অনেক বাধা, অনেক প্রতিবন্ধকতা পার করে আমরা সফলতার ঘোষণা পেয়েছি। আশা করি, আগামী জুনের মধ্যে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে। আমাদের খুব ভালো লাগতেছে।
গতকাল রাত কার্যক্রম আমাদের আন্দোলনকে বিভিন্ন দিকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে, অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চাইছে। আজকে আমরা সফল, আমাদের আন্দোলন যে যৌক্তিক তা প্রমাণ হয়েছে। আল্লার কাছে হাজার শুকরিয়া।
মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে অনুদানভুক্ত ১ হাজার ৫১৯টি স্বতন্ত্র মাদ্রাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা এবং সহকারী শিক্ষকরা তিন হাজার টাকা করে অনুদান পেয়ে থাকেন। এর বাইরে আরো ৫ হাজার ৯৩২টি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে, যেগুলো সরকারি কোনো অনুদান পায় না।