জনগণ রাস্তায় নামলেই সরকারের পতন হবে: মান্না

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৪, ০৪:৩০ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
‘যেদিন জনগণ রাস্তায় নামবে সেদিন সরকারের বিদায় ঘন্টা বেজে যাবে, আগামীতে আরো বড় সুসংবাদ আসছে’ বলে মন্তব্য করেছেন মাহমুদুর রহমান মান্না।
শনিবার (২৫ মে) দুপুরে এক অবস্থান কর্মসূচিতে দেশের অর্থনীতির অবস্থা, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি তুলে ধরে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, এই সরকার সব খানে দূর্বল। জনগণ বলেছিলো, পাঁচ বছর টিকে থাকার, আমি বলি, পাঁচ বছর টিকার কোনো কারণ নাই। যদি আমরা-আপনারা সবাই এক সঙ্গে রাস্তায় নামি… সেদিন রাস্তায় নামবেন, ঠিক মতো নামবেন সেইদিন ঘন্টা বেজে যাবে।
মানুষ তৈরি, ওই রাস্তার দিকে তাঁকিয়ে আছে। সর্বত্র, সমস্ত, সব পেশার মানুষ জেগে গেছে। আগামীতে আরো বড় সুসংবাদ পাবেন। আন্দোলনের পথে আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী মোটরচালক দলের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তি এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এই অবস্থান কর্মসূচি করা হয়।
‘প্রধানমন্ত্রী কাহিনী বানাচ্ছেন’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এই সরকার আরামে আছে, এই সরকার ভালো আছে? পরশুদিন ১৪ দলের সভাপতি উনি (শেখ হাসিনা) বলেছেন, আওয়ামী লীগ কষ্টে আছে, এই সরকার সমস্যার মধ্যে আছে। কেনো? বাহানা করেছেন… আমি দেশের কোনো অংশ কারো কাছে বন্ধক দিয়ে বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকতে চাই না। আগে যেরকম বলেছিলে, ওরা আমার কাছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ চেয়েছিলো আমি দেই নাই। কারা? বলেছিলো, মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র নাকি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছেন, সেন্ট মার্টিন কেনো আমরা বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমিও চাইনি। তারপর আর সেই কথা বলেনি।'
আরো পড়ুন: দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা ‘টালমাটাল’
'এবার কাহিনী তৈরি করেছেন ওরা এক সাদা চামড়ার লোক নাকি তাকে (শেখ হাসিনা) প্রস্তাব দিয়েছেন ওই রাখাইনদের একটা অংশ নিয়ে আর পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে নতুন একটা খ্রিষ্টান রাজ্য গড়ে তুলতে হবে… সেই প্রস্তাব তাকে (শেখ হাসিনা) দেয়া হয়েছে। আমি প্রথম বলতে চাই, আমার দেশের মাটি নিয়ে কেউ আরেকটা রাষ্ট্র করতে চায়, এরকম কথা যেই বলুক আমরা তার বিরুদ্ধে আছি। কিন্তু কে বলেছে? শেখ হাসিনা … তিনবার নাকি চারবারের প্রধানমন্ত্রী। এই যে এক এমপি ছিলো তথাকথিত তিনবারের এমপি কলকাতায় গিয়ে পিনাকী ভট্টাচার্যের কথায় জয়বাংলা হয়ে গেছে। এরকম তথাকথিত চারবারের প্রধানমন্ত্রী কত বড় দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি করেছেন।'
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তার কাছে প্রস্তাবটা কে দিয়েছে ? এক সাদা চামড়া বললে তো হবে না। চামড়া সাদা তো বৃটিশদেরও, ইউরোপীয়ানদের, কানাডীয়ানদের, জাপানিজদের আর যদি কারো ধাবলকুষ্ঠ হয় তাহলে পুরোটাই সাদা। কোন সাদা চামড়ার লোক আপনাকে এই প্রস্তাব দিয়েছে সেটা বলতে হবে।'
‘তিনি সেটা বলতে পারবেন না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই, কোন মানুষ, কোন সরকার, কোন দেশ আপনার কাছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চায়। কাহিনী বানিয়ে মনে করবেন কান্না-কাটি করবো আর আপনার দুখে বোধহয় সবার মন গলে যাবে আরে আপনাকে বলবে, না আপনিই থাকেন আমরা সেই বান্দা নই।'
‘আরো নিষেধাজ্ঞা আসছে’
মান্না বলেন, ‘সরকার সমস্যায় আছে। তার তৈরি সেনাবাহিনী প্রধানের নামে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কি কারণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে? সরাসরি বলেছে দুর্নীতির কারণে। দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যবসা পাইয়ে দিয়েছে নিজের ভাইদের, দু্নীতির মাধ্যমে নিজের ভাই খুনের আসামী তাকে জেল থেকে মুক্ত করে দিয়েছে। আমার মনে প্রশ্ন হয়, ওই যে, খুনের আসামীকে জেল থেকে মুক্ত করে দিলো ওটা শুধু জেনারেল আজিজ বলেছেন তাই হয়েছে, প্রেসিডেন্টের সই করতে হয়নি, যিনি তখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তাকে তার প্রধানমন্ত্রী রিকোয়েস্ট করে বলেন নাই… তাকে ছেড়ে দেন।'
‘অতএব স্যাংশন যদি ঠিক মতো হয়, তাহলে শুধু সেনা প্রধান খাবেন না, তৎকালীন রাষ্ট্রপতিও খাবেন, এখনকার এবং তখনকার যে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও স্যানশন খাবেন। অপেক্ষা করেন, আমেরিকার স্যানশন দিতে হবে না, আমরাই আপনাকে স্যানশন দেবো। সেই পথ তৈরি হচ্ছে, সেই পথে মানুষ এখন যাচ্ছে।'
আরো পড়ুন: এবার মুজিবুল হক চুন্নুকে একহাত নিলেন ব্যারিস্টার সুমন
সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ভাবতে পারেন একটা লোক কত ধরণের দুর্নীতি করেছে। একজনকে র্যাব প্রধান বানিয়েছিলেন, তারপরে পুলিশ প্রধান, তারপরে তার নামে পুরো বাহিনীরই বদনাম হয়েছে, র্যাব স্যানশন খেয়েছে, এখন আবার তার নামে আমেরিকা নয়, বিদেশ নয়, দেশের মধ্য থেকে তদন্ত হচ্ছে… সব একাউন্ট জব্দ, বন্ধ এবং তার যত সম্পত্তি আছে সব কিছু বাজেয়াপ্ত।'
‘আমার জানতে ইচ্ছা করে বেনজীর আহমেদের কত টাকা আছে ব্যাংকে? এই যে এতোদিন পরে তার ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করলেন কেনো এতোদিন সময় দিলেন? মানে মাল যা কামিয়েছে সেইগুলো বাইরে ট্রান্সফার করে দেয়ার জন্য। পত্রিকায় দেখলাম বেনজীর ও তার পরিবারের সম্পত্তির পরিমান ৩৪২ বিঘা। তার ব্যাংকে কত টাকা ছিলো সেটা তাদের জানবার কথা। আমি দাবি করছি তাও জানান, আমি দাবি করছি কেনো এতোদিন পরে তার নামে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলো…ওই কোর্টকে জিজ্ঞাসা করেন… দুদক যখন তদন্ত করতে চেয়েছিলো তখন হাইকোর্ট কেনো তদন্ত বন্ধ করেছিলো কার নির্দেশে?'
আনোয়ারুল আজীম আনারের প্রসঙ্গ টেনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম, আওয়ামী লীগ তিনটা কারণে অস্বস্তিতে আছে। আজিজ, বেনজীর এবং একজন এমপির কারণে। সে (আনোয়ারুল আজিম আনার) এমপি নাকী? জনগণ ভোট দিয়েছে? দেয় নাই।'
‘সেই এমপি যার নামে রেড এলার্ট ছিলো। যার নামে খুনের মামলা ছিলো, যার নামে ধর্ষণ-লুট সব ধরনের মামলা ছিলো এবং সেই এমপি নিজেই বলেছিলেন,আমি প্রথমবার যখন এমপি হয়েছি তখন কয়েকটা মামলা উঠে গেছে। তার পরে ধীরে ধীরে এবার এমপি হবার পর আমার নামে সব মামলা উঠে গেছে। সব চোর-চোট্টা-খুনি ডাকাত মিলে আওয়ামী লীগের দল।'
জাতীয়তাবাদী মোটরচালক দলের সভাপতি সেলিম রেজা বাবুর সভাপতিত্বে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সহ প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় নেতা আজমল হোসেন পাইলট, ভিপি ইব্রাহীম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।