চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গতকাল ইদিনা পার্কে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে ৩-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে নকআউটপর্ব নিশ্চিত করেছে স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা। বদলি হিসেবে মাঠে নেমে গোলের ধারা অব্যাহত রেখেছেন দলটির স্প্যানিশ ফরওয়ার্ড ফেরান তোরেস। অন্যদিকে জুভেন্টাসের কাছে অ্যাওয়ে ম্যাচে হেরে ম্যানচেস্টার সিটির হতাশা আরো বেড়েছে। দিনের অপর ম্যাচগুলোতে জয়ী হয়েছে আর্সেনাল, এসি মিলান, আতলেতিকো মাদ্রিদ, লিলি, ফেইনুর্ড ও স্টুটগার্ট।

বরুশিয়ার ঘরের মাঠে জয়ের পর ১৫ পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছ বার্সেলোনা। জার্মানিতে ফেরান তোরেসের নায়কোচিত পারফরম্যান্সের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় অবশ্য লামিন ইয়ামাল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে রাফিনিয়া বার্সেলোনাকে এগিয়ে দেন। মৌসুমে ব্রাজিলিয়ান তারকার এটি ১৭তম গোল। ৬০ মিনিটে সেরহু গুইরাসি পেনাল্টি থেকে ডর্টমুন্ডকে সমতায় ফেরান। বদলি খেলোয়াড় তোরেস ৭৫ মিনিটে আবারো বার্সেলোনাকে এগিয়ে দেন। ফারমিন লোপেজের শট সেভ হলে ফিরতি বল তোরেস জালে জড়ান। গুইরাসি দ্রুতই নিজের দ্বিতীয় গোল করে আবারো ডর্টমুন্ডকে সমতায় ফেরান। ম্যাচ শেষে পাঁচ মিনিট লামিন ইয়ামালের দুর্দান্ত পাসে তোরেস বার্সেলোনাকে জয় উপহার দেন। এই মুহূর্তে বার্সেলোনার যা অবস্থানে তাতে নিঃসন্দেহে বলাই যায় শীর্ষ আটে থেকে সরাসরি নকআউট পর্বের টিকেট পেয়ে গেছে লিভারপুলের পরের অবস্থানে থাকা কাতালান জায়ান্টরা। মোনাকোর মাঠে হেরে আসর শুরুর পর বার্সেলোনার আগের চার জয়ের তিনটি ছিল ঘরের মাঠে। অ্যাওয়ে ম্যাচে জিতেছিল কেবল রেড স্টার বেলগ্রেডের বিপক্ষে। প্রথমবার শক্ত কোনো প্রতিপক্ষের মাঠে জিতেছে তারা। ইদুনা পার্কে জয় বার্সেলোনা কোচের কাছে তাই বিশেষ কিছু। হ্যান্সি ফ্লিক বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা সত্যিই ভালো খেলেছি। বল পায়ে আমরা দুর্দান্ত ছিলাম এবং তারা ১-১, এরপর ২-২ সমতা ফেরানোর পরও আমরা দৃঢ় ছিলাম। এখানে জেতা সত্যিই স্পেশাল।’ জয়ের নায়ক ফেরানের পারফরম্যান্সেও মুগ্ধ ফ্লিক। ৭১তম মিনিটে তোরেসকে নামানোসহ একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন আনেন জার্মান কোচ। মাঠে নামার চার মিনিটের মাথায় নিজের প্রথম গোলে দলকে দ্বিতীয়বার এগিয়ে নেন এই তরুণ। পেশির চোটে এই মৌসুমে দলের আটটি ম্যাচে তিনি খেলতে পারেননি। ফেরার পর থেকে দারুণ ছন্দে আছেন ২৪ বছর বয়সি ফরোয়ার্ড। সবশেষ তিন ম্যাচে তার গোল চারটি।

এদিকে দিনের আরেক ম্যাচে গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর সিটির বিপক্ষে তুরিনে ডুসান ভøাহোভিচের গোলে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে এগিয়ে যায় জুভেন্টাস। গোলরক্ষক এডারসন ভøাহোভিচের হেডটি ধরতে ব্যর্থ হলে গোল হজম করতে হয়েছে সিটিকে। মাইকেল ডি গ্রেগোরিওর দুর্দান্ত সেভে ইকাই গুনদোয়ান সমতা ফেলাতে ব্যর্থ হন। ৭৫ মিনিটে অ্যাক্রোবেটিং ফিনিশে ওয়েস্টন ম্যাককিনি ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। জুভেন্টাস গ্রুপপর্বে ছয় ম্যাচে ১১ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে, হাতে রয়েছে আর দুই ম্যাচ।

এই পয়েন্টে অন্তত নক আউট পর্বের প্লে-অফে খেলতে পারবে জুভেন্টাস। অন্যদিকে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ১০ ম্যাচের মাত্র একটিতে জয়ী সিটি রয়েছে দারুণ অস্বস্তিতে। এই ম্যাচগুলোর মধ্যে হেরেছে আবার সাতটিতে। ছয় ম্যাচে মাত্র ৮ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ গ্রুপপর্বের টেবিলে ২২তম স্থানে রয়েছে সিটিজেনরা। শীর্ষ ২৪টি দল নক আউট পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। প্যারিস সফরে পিএসজির বিপক্ষে পরবর্তী ম্যাচটি তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গার্দিওলা বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই পয়েন্ট সংগ্রহ করতে হবে। প্যারিসে গিয়ে সেই চেষ্টাই করব। একই সঙ্গে ঘরের মাঠে ক্লাব ব্রাগের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচেও একই চেষ্টা থাকবে।’

লন্ডনে মোনাকোকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে আর্সেনাল। দলটির ইংলিশ উইঙ্গার বুকায়ো সাকা করেছেন দুই গোল। তার গোলেই গানার্সরা প্রথমার্ধে লিড পায়। ৭৮ মিনিটে সাকা ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এরপর ম্যাচের শেষ ভাগে সাকার অ্যাসিস্টে বদলি খেলোয়াড় কেই হাভার্টজ দলের হয়ে তৃতীয় গোলটি করেছেন। যে ছয়টি দলের সংগ্রহে ১৩ পয়েন্ট রয়েছে মিকেল আর্তেতার আর্সেনাল তার মধ্যে একটি।

ফ্রান্সে স্টার্ম গ্রাজকে ৩-২ গোলে পরাজিত করে লিঁল এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। এছাড়া আঁতোয়ান গ্রিজম্যানের জোড়া গোলে আতলেতিকো মাদ্রিদ স্লোভান ব্রাতিসলাভাকে ৩-১ গোলে পরাজিত করেছে। সান সিরোতে ম্যাচ শেষের তিন মিনিট আগে টামি আব্রাহামের গোলে রেড স্টার বেলগ্রেডকে ২-১ গোলে পরাজিত করেছে মিলান।

রটারডামে স্পার্টা প্রাগকে ৪-২ গোলে বিধ্বস্ত করেছে ফেইনুর্ড। পিছিয়ে পড়েও ইয়ং বয়েজকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে নকআউট পর্বের আশা টিকিয়ে রেখেছে স্টুটগার্ট। আগামী বছর ২১ ও ২২ জানুয়ারি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পরবর্তী রাউন্ডের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে।