আড্ডায় জানা গেলো ‘তুফান’ সেটের অজানা গল্প

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৫ পিএম

আড্ডায় শাকিব-চঞ্চল-নাবিলা-মিমি
দেশের জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে চলছে সুপারহিট সিনেমা ’তুফান’। প্রেক্ষাগৃহে তুমুল সাড়া পেয়েছে সিনেমাটি। তবুও সিনেমাটি নিয়ে আগ্রহ, উন্মাদনা কমেনি দেশি–বিদেশি দর্শকদের। চরকিতে মহাসমারোহে সিনেমাটি দেখছেন দর্শকরা। ফেসবুকের গ্রুপে গ্রুপে চলছে মুগ্ধতার আলোচনা।
দেশ–বিদেশে ইতিহাস তৈরি করা সিনেমা তুফান নিয়ে দর্শকের কৌতূহলের শেষ নেই। অন স্ক্রিন সিনেমা দেখার পর দর্শকের আগ্রহ অফ স্ক্রিনেরর গল্প শোনার। সেই আগ্রহের কথা মাথায় রেখে সিনেমাটির কেন্দ্রিয় চার অভিনয়শিল্পী– শাকিব খান, নাবিলা, চঞ্চল চৌধুরী ও মিমি চক্রবর্তী– দিয়েছেন বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর। তুফান মুক্তির আগে, ১২ জুন, রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে একসঙ্গে হয়েছিলেন তারা। সেখানেই কথাগুলো বলেছেন অভিনয়শিল্পীরা।
শুটিং সেটে কে বেশি নার্ভাস ছিলেন?–
’তুফান’ সিনেমার মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর বড় পর্দায় ফেরা মাসুমা রহমান নাবিলা বলেন, ’তুফানে আমি যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, কর্মক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা আমার চেয়ে অনেক বেশি। তাই আমি বেশি নার্ভাস ছিলাম।
আরো পড়ুন: ১ কোটি ১ লাখ ১ টাকা দেনমোহরে সানাইয়ের বিয়ে
’এর আগে চঞ্চল ভাইয়ের (চঞ্চল চৌধুরী) সঙ্গে আমার কাজের অভিজ্ঞতা আছে, তাই তার সঙ্গে নার্ভাসনেসটা কম ছিল। তবে শাকিব খানের সঙ্গে প্রথম দিন কাজ করতে গিয়ে খুব নার্ভাস ছিলাম। মিমির (মিমি চক্রবর্তী) সঙ্গে প্রথম শটের দিন আমি দূর থেকে তাকে দেখছিলাম। প্রথম দেখাতেই মিমি আমাকে হাত নেড়ে সম্মোধন করে। সেটা আমার কাছে ওয়েলকামিং ছিল এবং নার্ভাসনেস কমিয়ে দিয়েছিল।
’শাকিব খানের সঙ্গে প্রথম শটের আগে ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কারণ সে সুপারস্টার, মেগাস্টার। সিনেমায় আমাদের দুজনের লাস্ট সিনটাই ছিল শুটিং সেটে আমাদের প্রথম সিন। আমি খুব নার্ভাস ছিলাম। তবে ধীরে ধীরে শাকিব খান আমাকে অনেক বেশি ইজি করে ফেলেন। তিনি লাভলি কো স্টার এবং তিনি তার কাজটা সুন্দর করে করে ফেলন।’

নাবিলার কথার মধ্যেই তুফানি প্রশ্ন নিয়ে ঢুকে পরেন চঞ্চল চৌধুরী। শাকিব খানকে উদ্দেশ করে চঞ্চল বলেন, ’কোনো নায়িকা যখন বলেন সে নার্ভাস ফিল করছে, আপনি তখন কী করেন? নার্ভাসনেসটা কাটান কীভাবে?’ শাকিবের সোজা–সাপ্টা উত্তর, ’এর উত্তর আমি দিতে পারব না। এটা নায়িকাদের জিজ্ঞেস করেন।’
শাকিবকে আবারও চঞ্চলের প্রশ্ন, ’মিমি কি নার্ভাস ছিল’? ’না, একদমই না। দেখে মনে হয়নি’, বলেন শাকিব। শাকিব যোগ করেন, ’ইনফ্যাক্ট নাবিলা আজকে বলছে সে নার্ভাস ছিল। নাবিলাকে দেখে বোঝাই যায়নি।’ শাকিবের বিস্ময় কমাতে নাবিলার ভাষ্য, ’আমি নার্ভাসনেস হাইড করতে অনেক পটু।’
আরো পড়ুন: নিজের অধঃপতন নিয়ে মুখ খুললেন গায়ক নোবেল
শাকিব খানের সঙ্গে প্রথম দৃশ্যধারণের অভিজ্ঞতা নিয়ে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ’শাকিব খানের সঙ্গে প্রথম যে দৃশ্যটি ছিল, সেটা শুট করতে গিয়ে আমি ওরকম কোনো আচরণই করিনি যে এটা আমার আর শাকিবের প্রথম স্ক্রিন শেয়ার করা। রেকর্ডে যাওয়ার আগে থেকেই আমি অভিনয়ে ঢুকে গেছি। একটা পর্যায়ে শাকিব খান ভেবেছিলেন আমি হয়তো অন্য কথা বলছি। কিন্তু ওটা রিহার্সেল ছিল।’
শাকিব খান বলেন, ’অভিনয়শিল্পীদের নার্ভাসনেস কাজ করে অফস্ক্রিন। ধরো প্রথমবার দেখা হলো, প্রথম কাজ করার কথা হচ্ছে, তখন কিছুটা নার্ভাস লাগে। কিন্তু যখন ক্যামেরার সামনে চলে যাই, তখন আর কোনো নার্ভাসনেস কাজ করে না।’

তুফান সিনেমায় সহশিল্পী হিসেবে কার কাকে পছন্দ–
এ প্রশ্নের উত্তর দিতে অনীহা সবার। তবে শাকিব খান বলেন, ’আমি আমার সব সিনেমাতেই খুব অনেস্ট। যখন যে সিনেমা করেছি সেই সিনেমার হিরোইন আমার প্রিয় সহশিল্পী।’
নিজের কথা না বললেও শাকিব–চঞ্চলের রসায়ন নিয়ে কথা বলেছেন নাবিলা। বলেন, ’তুফানে পছন্দের সহশিল্পীর নাম বলা আমাদের জন্য কঠিন হলেও শাকিব খানের ব্যাপারে বলতে পারি। তার প্রিয় সহশিল্পী চঞ্চল চৌধুরী। অফস্ক্রিনে তারা সারাক্ষণই ব্রাদারহুড মুডে ছিলেন।’
রায়হান রাফির শুটিং–
’তুফান’ রায়হান রাফির স্বপ্নের সিনেমা। প্রথম দিন থেকেই এ কথা শুনেছেন শাকিব খান। সুপারস্টারের ভাষ্যে, ’রাফি আমাকে বলেছে যে, সে কোনো সেক্টরে কম্প্রোমাইজ করতে চায়না। ও যে স্বপ্নটা দেখেছে সেটাই করেছে।’
রায়হান রাফির সঙ্গে শাকিব, চঞ্চল, নাবিলা, মিমি– চার জনেরই প্রথম কাজ। চঞ্চল জানান, শুটিং সেটে সংলাপে অনেক পরিবর্তন এসেছে। শাকিব যোগ করেন, ’রাফি তুফানকে কমার্সিয়াল এবং ক্ল্যাসিক্যাল ঢংয়ের বানাতে চেয়েছে। অনেক পরেও যদি সিনেমাটি কেউ দেখেন, তাহলে তার এটা মনে হবে।’
খুঁতখুঁতে রাফি–
নাবিলা একটি গল্প বলার মাধ্যমে বোঝালেন রাফি শুটিংয়ে কতটা খুঁতখুঁতে। অভিনেত্রী বলেন, ’আমার ছোট একটা সিনে নির্দিষ্ট একটা প্রপ দরকার ছিল। কিন্তু প্রপটা আসেনি। আমি রেডি, সেট রেডি, সব রেডি। অনেক দূরে শুটিং করছিলাম আমরা। প্রপটা আসতে অনেক সময় লাগবে। তারপরও সেটার জন্য আমরা সারাদিন বসেছিলাম। সবাই রাফিকে বলার চেষ্টা করছিল যে, প্রপটা ছাড়াই রেকর্ড করি। কিন্তু রাফি নাছোড়বান্দা, ওটা তার লাগবেই। ওইদিন আমার একটা শটই ছিল। একটা শটের জন্য আমি সারাদিন বসে ছিলাম।
যেভাবে তৈরি হলো ’তুফান, খুব ভয় পাইছি রে’ সংলাপ–
চঞ্চল চৌধুরীর মুখে এ সংলাপটি ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সংলাপটি তৈরির গল্প বলতে গিয়ে চঞ্চল বলেন, ’এ সংলাপটা আগে কোথাও লেখা ছিল না। শুটিংয়ের সময় ইনসট্যান্ট রাফি আমাকে বললো, ’চঞ্চল ভাই এ ডায়লগটা আমার লাগবে।’
নাবিলা বলেন, স্ক্রিপ্টের ওই স্পন্টিনিউয়াস পরিবর্তনের কারণেই আমাদের অভিনয়টাও স্পন্টিনিউয়াস হয়েছে, রিয়েলিস্টিক লেগেছে।

সেটে প্রথম কে হতেন?
তুফানে নাকি সবাই ফার্স্ট ছিল, এমনটাই জানালেন চঞ্চল। আর তিনি নাকি ছিলেন ফার্স্টের চেয়েও ফার্স্ট। চঞ্চল বলেন, ’আমি কল টাইমের আগেই রেডি হয়ে বসে থাকতাম, নিজেই গাড়ি কল করতাম, যে অ্যাসিসটেন্ট আমাকে নিতে আসবে তার খবর নিতাম।’
যোগ করে শাকিব বলেন, ’কাজটার ব্যাপারে সবারই খুব ভালোবাসা ছিল, সবাই এক্সাইটেডও ছিল। আমাকে প্রতিদিন ওয়েদার রিপোর্ট দেয়া হতো। একসময় আমি বলে দিয়েছিলাম, আমাকে ওয়েদার রিপোর্ট যেন আর না দেয়া হয়। যখন হোটেল থেকে নেমে গাড়িতে উঠেছি, আবার গাড়ি থেকে নেমে ভ্যানে গিয়েছি, ওইটুকু সময়ে যে গরম লাগত, মনে হতো আজকে আর শুটিং করতে পারব না ভাই, ইম্পসিবল। কিন্তু যখন কাজে ঢুকে গেছি, তখন আর গরম লাগেনি।
আরো পড়ুন: যে কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেই সারিকা
ঈদুল আযহা উপলক্ষে ১৭ জুন দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় শাকিব খান অভিনীত 'তুফান'। দেশের বাইরেও 'তুফান' তোলে এ সিনেমা। আদনান আদিব খান, রায়হান রাফির গল্পে, আদনান আদিব খানের চিত্রনাট্যে ’তুফান’ সিনেমায় শাকিব খানকে দ্বৈত চরিত্রে দেখা গেছে। নায়কের বিপরীতে অভিনয় করেছেন ভারতের মিমি চক্রবর্তী এবং বাংলাদেশের নাবিলা।
সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে আলফা-আই স্টুডিওজ লিমিটেড; ডিজিটাল পার্টনার চরকি এবং ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে আছে এসভিএফ। চরকিতে ’তুফানে’র পেমেন্ট পার্টনার বিকাশ ও পেইন্ট পার্টনার এশিয়ান পেইন্ট।