কী আছে অস্কারজয়ী ‘প্যারাসাইট’ সিনেমাতে

nakib
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:৫৩ পিএম

প্যারাসাইট ছবির একটি দৃশ্য
এবারের অস্কারে প্রথমবারের মতো ইংরেজি ভাষা বাইরে দক্ষিণ কোরিয়ার চলচিত্র অস্কার পুরস্কার পেয়ে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছে বিনোদন অঙ্গনে। ৯২ বছরের ইতিহাস ভেঙে দিয়ে অন্য ভাষার কোন চলচিত্রের অস্কায় জয় বিরল এক কীর্তি। এর আগে কেউ ভাবতেও পারেনি ইংরেজি ভাষার বাইরেও কোন চলচিত্রের জন্য অস্কার পাওয়া সম্ভব।পুরস্কারের ঘোষণা শুনার পর ছবিটির পরিচালক বংজোন হো ও অবাক হয়েছিলেন ।
ডার্ক থ্রিলার ও কমেডি ধাচের এ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২০১৯ সালে। মুক্তির পরেই ছবিটি নিয়ে আলোচনা ও সমারোচনার ঝড় ওঠে। ২০১৯ সালে কান চলচিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার করা হয়েছিল এশিয়ার এ ছবিটির। সেখানে প্রথম কোন কোরিয়ান চলচিত্র হিসেবে ছবিটি “পেল্ম ডি ওরে” পুরস্কারে ভুষিত হয়।
প্যারাসাইট ছবির নামরে অর্থই হলো পরজীবী। ছবিটিতে একটি দরিদ্র কিন্তু একত্রিত পরিবার কিভাবে কোরিয়ার ব্যয়বহুল নগরী সিউল শহরে জীবন পরিচালনা করতে যে সংগ্রাম করতে থাকে সেটা ফুটিয়ে তুলা হয়েছে। পাশাপাশি বিত্তশালী একটি কোরিয়ান পরিবারের সাথে তুলনা করে গল্পটি এগিয়ে গেছে। সামাজিক অবস্থান, অকাঙ্খা, বাস্তবতা ও পারিবারিক বন্ধন ও যে সকল ধনীরা দাসত্ব বজায় রেখে তা উপভোগ করে এমন একটি মিশ্র চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
একটি পরিবার বিশাল বাড়ি নিয়ে আধুনিক জীবন পরিচালনা করে। অন্যদিকে দরিদ্র পরিবারটি জরাজীর্ণ একটি বস্তির মতো জাগায় বসবাস করে। তারা চাকরি না থাকায় খুব কষ্টে জীবনযাপন করতে থাকে। তবে পরিবারের প্রধান কি হো নামের লোকটির এক স্কুলের বন্ধু তাকে ভালো একচি টিওশনির সন্ধান দেয়। জাল সার্টিফিকেট দেখিয়ে বিশাল সম্পশালী পরিবারের টিওশনি নেয়।
পরবর্তীতে সেই বিত্তশালী পার্ক পরিবারের একটি ছোট ছেলের আর্ট শিক্ষকের দরকার হলে বন্ধুর বোন পরিচয় দিয়ে কি হো তার বোনকে চাকরিটি ব্যবস্থা করে দেয়। তবে পরবর্তীতে পার্কের ছোট ছেলে তাদের দুজন শিক্ষকের কাচ থেকেই একই ধরণের ঘ্রাণ অনুভব করে। তাদের শরীর থেকে দরিদ্র মানুষের গন্ধ পাওয়া যায় বলে তাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়।
সাম্প্রতিককালে দক্ষিণ কোরিয়ায় শ্রেণীবৈষম্য বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে, তাই তা প্রায়ই উঠে আসছে তাদের মিডিয়ায়। অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা কিম পরিবারের চাপা ক্ষোভ আর অসন্তোষকে কিন্তু পরিচালক কখনোই ওভার-ড্রামাটিক করে তুলে ধরেননি। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তাদের সহজেই মানিয়ে নেয়ার কিংবা আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাকে প্রথম প্রথম একটু অস্বাভাবিক লাগতে পারে।
অন্যদিকে বিশাল বাড়িটির নিচে একটি কক্ষে এ বাড়ির আগের মালিক লোকিয়ে ছিল লোনের দায় এড়ানোর জন্য। পরবর্তীতে তার মরদেহ পাওয়া যায় এবং বাড়িটির মালিকানা নিযে জটিলতা তৈরী হয় এবং সেখানে কয়েকটি মার্ডার হয়।
শুধু কাহিনীর অভিনবত্ব না, উপস্থাপনাও কৃতিত্বের দাবিদার। এক পরিবার বসে বসে যে বৃষ্টির সৌন্দর্য উপভোগ করছে, ভাগ্যের পরিহাসে সেই বৃষ্টির তোড়েই আরেক পরিবারের স্বপ্ন ভেসে ভেসে যাচ্ছে। আরেকটি দৃশ্যে মিস্টার পার্ক সন্দেহ করেন যে, তার ড্রাইভার দরিদ্র কাউকে গাড়িতে তুলে তার সাথে রাত কাটিয়েছে। পরবর্তীতে মিস্টার এবং মিসেস পার্ক সোফার ওপরে রোল-প্লে করার সময়ে সেই ঘটনার আদলে দরিদ্র হবার ভান করেন। তাদের রঙিন দুনিয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করা দরিদ্ররা হলো হাসি-ঠাট্টার পাত্র। যা নাড়া দিয়ে যায় দর্শকদের।
এভানে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের এক বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তুলা হয় কমেডি আর থ্রিলারের সমন্বয় ঘটিয়ে। যা পিছনে ফেলে দেয় গত বছরের আলোচিত ছবি ‘জোকার’ ও প্রশতবিশ্বযুদ্ধের কাহিনী নিয়ে নির্মিত ‘১৯১৭’ নামের ছবিটিকে।