জাতীয় পার্টি বৈষম্যের শিকার: জিএম কাদের

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:১৯ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টি সর্বতোভাবে সমর্থন দিয়ে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলো। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেয়ার কারণে আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে রংপুরে মামলা হয়েছে পার্টির পদ পদবী উল্লেখ করে। আমাদের নেতা-কর্মীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারণে গ্রেপ্তার হয়ে হাজতবাস করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় সভাপতির বক্তৃতায় গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১ জুলাই ছাত্ররা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করলে, আমি ৩ জুলাই সংসদে তখনকার প্রধানমন্ত্রীর সামনে ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে বক্তৃতা দিয়েছি। বক্তৃতায় আমি বলেছি, ছাত্রদের এই আন্দোলন যৌক্তিক। চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংবিধান পরিপন্থি। বৈষম্যের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ যেকোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। ৬ জুলাই গাজীপুরে জাতীয় পার্টির কাউন্সিলে বক্তৃতায় আমি বলেছি, চাকরিতে কোটা পদ্ধতি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি। তখন আমি বলেছিলাম, চাকরিতে কোটা পদ্ধতি হচ্ছে বৈষম্য। আমাদের শহীদ মিনার হচ্ছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে জীবন দেয়ার প্রতীক। আমি ছাত্রদের শহীদ মিনারে গিয়ে শপথ নিতে বলেছি। যখন ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে আটক করা হলো, আমরা তাদের মুক্তির দাবি করেছি।
আরো পড়ুন: আনুপাতিক হারে নির্বাচন জটিলতা তৈরি করবে: রুহুল কবির রিজভী
ছাত্র আন্দোলনে যখন গুলি চালানো হলো, আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছি আমরা। রাজনীতিবিদদের মধ্যে সবার আগে রংপুরে গিয়ে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছি আমি। শহীদ আবু সাঈদের শোকার্ত বাবা-মাকে সান্তনা দিয়েছি। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ছাত্র আন্দোলনের সাফল্য নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একটি চক্র জাতীয় পার্টিকে ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষের দল হিসেবে চিহ্নিত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যে ছাত্রদের আন্দোলনে আমরা সমর্থন দিয়েছি, আমাদের নেতা-কর্মীরা অংশ নিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়ে জেল খেটেছে। সেই আন্দোলনের হত্যা মামলায় জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের আসামি করা হচ্ছে। এই অন্যায় মেনে নেয়া হবে না। আমরা রাজপথে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ করবো। জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের সঙ্গে অবিচার হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীরা রক্ত দিয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয় হয়রানির বিরুদ্ধে প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে এর প্রতিবাদ করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েও জাতীয় পার্টি বৈষম্যের শিকার। মিথ্যা মামলা দিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ন্যায় বিচার ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রামে অংশ নিয়েও জাতীয় পার্টি ন্যায় বিচার পাচ্ছে না।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের নামে মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে রংপুর থেকে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। রংপুরের মানুষ রাস্তায় জীবনবাজী রেখে আন্দোলন করে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ফাঁসি থেকে রক্ষা করেছে। আমার জন্যও তারা রাজপথে লড়াই শুরু করেছে। আমরা তাদের ঋণ কখনোই শোধ করতে পারবো না। আমরা অপরাধ করিনি, আমাদের অপরাধী করার অপচেষ্টা চলছে। আওয়ামী লীগের দোষর হিসেবে আমাদের ব্র্যান্ডিং করার অপচেষ্টা চলছে। আমি গণমাধ্যমসহ সবার সামনে পরিস্কার করে বলেছি, ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে আমরা যেতে চাইনি, আমাদের জোর করে নির্বাচনে নেয়া হয়েছে। ২০১৪ ও ২০২৪ সালে নির্বাচনে যেতে বাধ্য হয়েছে জাতীয় পার্টি। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ দেশের সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলো। আবার, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও উপজেলা পরিষদ ও মেয়র নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলো বিএনপি। আওয়ামী লীগের নির্বাচন ব্যবস্থায় অংশ নেয়ার কারণে কাউকে স্বৈরাচারের দোষর বলা উচিত নয়। কারণ, আওয়ামী লীগের নির্বাচন ব্যবস্থায় বিএনপিসহ সব দলই অংশ নিয়েছিলো। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্যরা চার বছর সংসদে ভুমিকা রেখেছেন। আমরা মন্ত্রী বা এমপি হবার জন্য রাজনীতি করিনা। জনগনের পক্ষে কাজ করারই আমাদের রাজনীতির মূখ্য উদ্দেশ্য। সংসদে ও সংসদের বাইরে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছি আমি।
আরো পড়ুন: রাষ্ট্র সংস্কারের সংলাপে না ডাকায় আমরা বিব্রত
এ সময় গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির একটি উজ্জল ভবিষ্যত আছে। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রেসিডিয়াম সভায় উপস্থিত ছিলেন- সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু, সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, এ টি ইউ তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, নাসরিন জাহান রতনা, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, এড. মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মো. মিজানুর রহমান, সৈয়দ দিদার বখত, নাজমা আক্তার, আলমগীর সিকদার লোটন, মো. এমরান হোসেন মিয়া, মেজর অব. রানা মোহাম্মদ সোহেল, লিয়াকত হোসেন খোকা, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, জহিরুল আলম রুবেল, শেরীফা কাদের, মনিরুল ইসলাম মিলন, মাসরুর মওলা, মো. জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, মো. আরিফুর রহমান খান, মো. আশরাফুজ্জামান আশু, আমিনুল ইসলাম ঝন্টু ও এস এম ইয়াসির।