তারেক রহমান
জনগণের ক্ষমতা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪৫ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
দেশে জনগনের ক্ষমতায় নিশ্চিত না করা পর্যন্ত চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, হাজার হাজার আহত মানুষের আত্মচিৎকার, হাজারো লাখো শহীদের রক্ত স্নাত জমিনে আমাদের মধ্যে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে যেকোনো মূল্যে আমাদেরকে সেই ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে ইস্কাটনে গার্ডেনের লেডিস ক্লাবে দুর্গা পূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়কে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তারেক রহমান বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে একাত্তর সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ আর হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে ’২৪ সালের দেশ ও জনগনের স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ সব ক্ষেত্রেই গণতন্ত্রকামী জনগন বিজয়ী হয়েছে। এ কারণে আমি বিশ্বাস করি, জনগনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করা গেলে কোনো প্রকার ষড়যন্ত্র করে আর কেউ আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে সক্ষম হবে না ইনশাল্লাহ। আমি বলতে চাই, জনগনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে ইনশাল্লাহ।
হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, আমাদের একটিই বার্তা- বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী, সংশয়বাদী কিংবা মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী এই বাংলাদেশ আপনার-আামার আমাদের সবার। তথাকথিত সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু নয়, এই জাতি রাষ্ট্রের আমাদের একটাই গর্বিত পরিচয় আমরা সবাই বাংলাদেশী।’
তিনি বলেন, এই বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আপনার যতটুকু অধিকার আমারও ঠিক ততটুকুই অধিকার। আমাদের সবার কাছে সবার আগে বাংলাদেশের স্বার্থই হবে সবচাইতে বড়। রাষ্ট্র-রাজনীতি, শাসন-প্রশাসন পরিচালনায় আমরা গুরুত্ব দেবো মেরিটোক্রেসীকে। এদেশের সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে এই বিএনপির নীতি এটাই বিএনপির রাজনীতি। এ সময় সবাইকে নিজেদের অধিকার আদায় এবং দায়িত্ব কর্তব্য পালনে সর্তক থাকার আহ্বানও জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
আরো পড়ুন: যেভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সবাই আমরা একমত পতিত স্বৈরাচার- মাফিয়া সরকারের বেনিফিশিয়ারিদের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখে লক্ষ্যে পৌছানো সহজ নয়। তিনি বলেন, নিজেদের চরিতার্থ স্বার্থ হাসিল করতে পতিত পরাজিত শক্তি দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতো। সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের কোন একটি ঘটনারও বিচার করেনি তারা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর স্বৈরশাসক পালানোর পর দেশের মুসলমান, হিন্দুসহ সব ধর্মের মানুষ এখন আয়না ঘর ভীতিমুক্ত। আজ আমরা স্বাধীনভাবে এখানে একত্রিত হতে পেরেছি। তবে বিভিন্ন ধর্ম গোষ্ঠীর স্বার্থকে পুঁজি করে বা তাদেরকে ব্যবহার করে বা কোন ধর্মকে ব্যবহার করে পলাতক স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া দোসররা যাতে কোন ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে না পারে, সে ব্যাপারে আপনাদেরকে ও আমাদেরকে সবাইকে সর্তক থাকতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, মাফিয়া সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে মেরামত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। ১৫ বছরের জঞ্জাল শেষ করে চলমান সংস্কার কার্যক্রম শেষ করা বিশাল কর্মযজ্ঞ। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করতে গিয়ে জনগনের প্রতিদিনের দু:খ দুর্দশা লাগব করা না গেলে জনগনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার নিশ্চিত করার বিষয়টি উপেক্ষিত থাকলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রম প্রশ্নের মুখে পড়বে। ফলে এই সরকারের কার্যক্রম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এজেন্ডাভিত্তিক করা অত্যন্ত জরুরি।
‘গুজবে কান দেবেন না’
১৫ বছরে ‘মাফিয়া সরকারের’ শাসনামলে হিন্দুসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ওপর অন্যায়-অত্যাচার করেছে দাবি করে সেই চিত্র তুলে ধরেন তারেক রহমান। হিন্দু সম্প্রদায়কে আস্বস্ত করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যাতে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ ধর্মীয় রীতি-নীতি নিশ্চিন্তে নিরাপদে উদযাপন করতে পারেন তেমন একটা রাষ্ট্র এবং সমাজ বিনির্মানের জন্যই বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ। সবার উদ্দেশ্যে আমাদের বার্তা একটিই… ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাবার অধিকার সবার। সুতরাং আপনাদের প্রতি বিনীত আহ্বান, পলাতক স্বৈরাচারের পৃষ্ঠপোষক এবং তাদের দোসরদের কোনো উস্কানিতে দয়া করে পা দেবেন না, কোনো গুজব, গুঞ্জনে দয়া করে কান দেবেন না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা জাতীয়তাবাদীতে বিশ্বাসী, সবাই মিলে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। ধর্ম যার যার দেশটা আমাদের সবার। ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে, আসুন আমরা সবাই মিলে একটি ঐক্যবদ্ধ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠন করি।
দলটির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সেই হিন্দুদের রক্ষার বহমান প্রক্রিয়া এখনো চলছে। আগে হিন্দুদের পূজার সময় কোন মন্দির পাহারা দিতে হতো না, এখন দেখি এসব! কেন? কোন মুসলমান হিন্দুদের মন্দির ভাঙতে পারে না, কোন ধর্মের এমন নেই। এটি কে করছে? যত ধরা পড়ছে সব আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ আর যুবলীগ। আমার এলাকায় যত হিন্দুদের জমি দখল করেছে সব আওয়ামী লীগের নেতা।
আরো পড়ুন: সবশেষ কবে, কখন বিদেশ গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, মা আসেন প্রতি বছর ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য। ৫ আগষ্ট এদেশ থেকে অসুর পালিয়ে গেছে। সত্যের জয় হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা একটি রেইনবো জাতি গঠন করতে চাই, এটি বিএনপির দর্শন, চিন্তা থেকে এর প্রতিফলন। এটি নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চিন্তার প্রতিফলনে কোন সন্দেহ নেই। ধর্মকে মূলধন করে অনেকে নেতা হয়ে যান, তারা নিজেরা লাভবান হচ্ছেন, এমনকি যাদেরকে নিয়ে লাভবান হচ্ছেন তাদের নিয়ে কোন ভাবনা নেই এই ধর্ম ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপিতে গোত্র ধর্ম নির্বিশেষে সবাই সমান। এটি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দল।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ধর্ম বিষয়ক সহ-সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপুর সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে দলের এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, আফরোজা খানম রীতা, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম জামাল, জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, অপর্না রায় দাস, সুশীল বড়ুয়া, রমেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, তুরন দে, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে অতিথিদের প্রসাদ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।