৭০ হাজার মানুষকে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ
লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলে নিহত ৫

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৬ এএম

দাবানল ঠেকানোর কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পানির সরবরাহ সংকটে পড়েছে বেশিরভাগ কর্মী। ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের কাছাকাছি কয়েকটি এলাকায় ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। এতে অন্তত ৭০ হাজার মানুষকে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দাবানলের কারণে এখন পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে এবং এক হাজারেরও বেশি বাড়ি পুড়ে গেছে। বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাত পর্যন্ত দাবানলটি একাধিক এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে।
দাবানল শুরু হওয়ার আগে, ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (এনডব্লিওএস) এই সপ্তাহের শুরুতে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির বেশিরভাগ অঞ্চলে তীব্র অগ্নিকাণ্ডের সতর্কতা জারি করেছিল। বিশেষত, শুষ্ক আবহাওয়া এবং অগ্নিসংবেদনশীল গাছপালা এ অবস্থার জন্য দায়ী। বর্তমানে আগুনের প্রভাব এতটাই ব্যাপক যে, উদ্ধারকর্মীরা নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও দাবানল ঠেকাতে পারছেন না।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির সুপারভাইজার লিন্ডসে হর্ভাথ জানিয়েছেন, এটি একটি গভীর ট্র্যাজেডি, এবং যারা এই আগুনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের জন্য আমাদের সহানুভূতি রইলো।’
দাবানলের বিস্তার ও ক্ষয়ক্ষতি
লস অ্যাঞ্জেলেসের সবচেয়ে বড় দাবানলটি প্যাসিফিক পালিসাডেস এলাকার দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি পর্যটন ও বসবাসযোগ্য এলাকা, যেখানে বহু সেলিব্রিটি এবং ধনী মানুষ বাস করেন। দাবানলটি ইতোমধ্যেই ৫ হাজার একরেরও বেশি এলাকা পুড়িয়ে ফেলেছে। স্থানীয় ফায়ার চিফ অ্যান্থনি মেরন জানান, এক হাজারের বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আরো হাজার হাজার বাড়ির জন্য হুমকি রয়েছে।
এছাড়া, আলতাদেনা এলাকায় ইটন ফায়ার নামে আরেকটি দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। যা এখন পর্যন্ত ২ হাজার একর জমি পুড়িয়ে ফেলেছে। এখানেই ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এই আগুনের তীব্রতা এবং গতিবেগের কারণে মানুষের পক্ষে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সুযোগও অনেক সময় তৈরি হচ্ছে না।
হারস্ট ফায়ার, লস অ্যাঞ্জেলেসের উত্তরে সিলমার এলাকায় ৫০০ একরের বেশি জমি পুড়েছে এই দাবানলে। এই আগুনের গতি এবং তীব্রতা উদ্ধারকর্মীদের কাজ অনেক বেশি কঠিন করে তুলেছে।
নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় ও উদ্ধারকর্মীদের সংগ্রাম
দাবানলে নিহতদের মধ্যে দুইজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এখনো নিহতদের পরিচয় জানানো হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষতির ঘটনা ঘটে তাদের ক্ষেত্রে, যারা সতর্কতার আগেই বাড়ি ছাড়তে পারেননি। একাধিক স্থান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ায়, হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নেয়ার জন্য অন্যত্র পালিয়েছেন।
অ্যান্থনি মেরন জানান, ‘আমাদের এত বড় আকারের দাবানলের মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও কর্মী নেই। ২৯টি ফায়ার ডিপার্টমেন্ট একসঙ্গে কাজ করলেও এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করা খুবই কঠিন।’
উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, দাবানলটি এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে যে, তাদের কাছে থাকা সীমিত জলসংকট এবং অত্যন্ত তীব্র বাতাস পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস পত্রিকা জানিয়েছে, দাবানল ঠেকানোর কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পানির সরবরাহ সংকটে পড়েছে বেশিরভাগ কর্মী।
ফেডারেল সহায়তার আশ্বাস
তবে, হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতোমধ্যেই দাবানল সম্পর্কিত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। তিনি ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন।
বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলেছে, ফেডারেল সংস্থাগুলো—যেমন, ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (এফইএমএ) এবং ন্যাশনাল গার্ড—স্থানীয় উদ্ধারকর্মীদের সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।